শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: বিদ্যুতের বিল দিতে পারেননি। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আত্মহত্যা করেন দাদু। তারপর থেকে বাড়িতে নেই বিদ্যুৎ। রাস্তার ধারে পেট্রল পাম্পের বাতিস্তম্ভের নিচে বসে পড়াশোনা করে দুই নাতি-নাতনি। অগ্রগতির যুগে যখন আলোয় ঝলমলে চারপাশ, তখন অন্ধকারে ঢাকা পরিবারের করুণ কাহিনির সাক্ষী জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর। জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে পড়াশোনা করে বিদ্যা অর্জন করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। দুশো বছরে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরও আলোয় ঝলমলে। ঘরে ঘরে আলো। কিন্তু বিদ্যুতের বিল দিতে না পারায় ওই গ্রামের তন্ত্র পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি। পরিবার সূত্রে খবর, দশ বছর আগে বাড়িতে বিদ্যুতের বিল এসেছিল দেড় লক্ষ টাকা। যা দেখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দা আপন তন্ত্রের বাবা নীরেন তন্ত্র। পরে আত্মঘাতী হন তিনি।
সেই থেকে বাড়িতে আর বিদ্যুৎ আসেনি। আপন তন্ত্রের দুই ছেলে-মেয়ে। বড় ছেলে রাজ তন্ত্র পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বোন রাখি পড়ে প্রথম শ্রেণিতে। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় পাহাড়পুর মোড় সংলগ্ন বালাপাড়া জাতীয় সড়কের পাশে পেট্রল পাম্পের বাতি স্তম্ভের নিচে বসে পড়াশোনা করে ভাইবোন। আপন তন্ত্র জানান, “অস্বাভাবিক বিদ্যুতের বিল মেটাতে না পারায় আত্মহত্যা করেছিলেন বাবা। বিদ্যুৎ দপ্তরের পক্ষ থেকে ১০ বছর আগে বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে কুপির আলোতে রান্না-খাওয়া চলছে। ছেলেমেয়ের পড়ার জন্য এখন পেট্রল পাম্পের আলোই ভরসা।”
পেট্রল পাম্পের কর্মী অনুপ দেবনাথ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি এই দুই ভাইবোন আমাদের পেট্রল পাম্পের আলোতে পড়াশোনা করে। বৃষ্টি হলে বাড়ি চলে যায়। বৃষ্টি কমলে আবার ফিরে আসে। দেখে খুব খারাপ লাগে।” ঘটনার কথা শুনে অবাক হয়েছেন পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের বিদায়ী উপপ্রধান বেণুরঞ্জন সরকার। জানান, “এই ধরনের ঘটনা কোনওভাবেই কাম্য নয়। যদিও এই পরিবারের তরফে আমাদের জানানো হয়নি। আমারও নজরে পড়েনি আগে। তবে এবার জানতে পারলাম। খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেব।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.