সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২১ জুলাই ১৯৯৩৷ দিনটার কথা মনে পড়লে এখনও চমকে ওঠেন৷ নিজে পুলিশ কর্মী হয়েও ২১ জুলাই পুলিশি অত্যাচারের কথা বলতে গিয়ে এখনও শিউরে ওঠেন৷ বলতে বলতে থমকে যান৷ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এখনও দু’চোখে জল আসে বছর ৫০-এর পুলিশ কর্মী সিরাজুল ইসলামের৷ বলতেও ভয় পান৷ কষ্টে গুমরে ওঠেন, তৎকালীন কংগ্রেসনেত্রী খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা পুলিশকর্মী সিরাজুল৷ পুলিশের বন্দুকের মুখ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাঁচানোর মাশুলও গুনতে হয়েছে তাঁকে৷ মমতাকে বাঁচানোর অপরাধে বরখাস্ত হয়েছিলেন৷ কিন্তু, অবশেষে এল সুদিন৷ প্রায় ২১ বছর চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর অবশেষে চাকরিতে ফিরতে চলেছেন পুলিশ কর্মী সিরাজুল ইসলামের৷
উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার ইছাপুর ভদ্রডাঙ্গা গ্রাম৷ চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর কোনওক্রমে মা-বাবা-ভাই ও বোনকে নিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছিলেন সিরাজুল৷ পুলিশের চাকরি হারিয়ে সাইকেলে মুদিখানার জিনিস ফেরি করে সংসার চালান৷ দিনে ১০০-১৫০ টাকার উপার্জনেই চলে নুন আনতে পানতা ফোরানো সংসার৷ ফেরি করে সংসার চালালেও নিজের অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন ঘাম-রক্ত দিয়ে৷ লড়েছেন দীর্ঘ মামলা৷ অবশেষে মিলেছে সুবিচার৷ প্রায় ২১ বছর পর পুলিশের চাকরি ফিরে পেতে চলেছেন সিরাজুল ইসলাম৷
১৯৮৮ সালের ১৯ জানুয়ারি৷ নিজের যোগ্যতায় পুলিশে চাকরি পান সিরাজুল৷ ১৯৯৩-এর ২১ জুলাই মহাকরণের নিরাপত্তার ডিউটি দেওয়া হয় তাঁকে৷ কিন্তু, ওই দিনেই যে তাঁকে এতবড় মাসুল দিতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি৷
তৎকালীন যুব কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাকরণ অভিযানের ডাক দেন৷ ব্রেবন রোড দিয়ে মিছিল এগোতেই পথ আটকে দাঁড়ায় পুলিশ৷ কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হয়৷ লাঠিচার্জের নির্দেশ দেয় পুলিশ৷ পুলিশের লাঠির বাড়িতে মাথা ফাটে মমতার৷ বিনা প্ররোচনায় লাঠিচার্জের প্রতিবাদ করেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের এসআই নির্মল বিশ্বাস, সার্জেন্ট প্রদীপ সরকার ও কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম৷ মমতাকে বাঁচাতে সেদিন বিদ্রোহী সিরাজুল পুলিশ কর্তাদের দিকেই বন্দুক উঁচিয়ে প্রতিবাদ করেন৷ মুহূর্তেই মমতাকে আড়াল করেন সিরাজুল৷ এই ঘটনার পরই লালবাজারের বড় কর্তার নজরে পড়েন তিনি৷ ১৯৯৬ সালে চাকরি থেকে বরখাস্ত হন সিরাজুল৷ ১৮ বছর আইনি লড়াই করার পর চাকরি ফিরে পান নির্মল বিশ্বাস৷ সার্জেন্ট প্রদীপ সরকারকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়৷ আর সিরাজুল ইসলাম হাইকোর্টে মামলা করেও বেশিদিন লড়তে পারেননি৷ পরে, কলকাতার একটি সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতায় পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সিরাজুল ইসলামকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে নিয়ে যান৷ সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে সিরাজুল ইসলামের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.