সুমিত বিশ্বাস, রঘুনাথপুর: চোখে সুরমা৷ মুখে দাড়ি৷ পরনে কালো রঙের জোব্বা৷ পায়ে নাগরা৷ সাদা ঘোড়ায় চড়ে ছুটছেন বুল্লা খাঁ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমলে ঠগি (দুষ্কৃতির দল) হামলা থেকে রেহাই দিতে! রুখাশুখা পুরুলিয়ার ধূ–ধূ প্রান্তরে ন্যাড়া পাহাড়ের পাশ দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যেমন ভাবে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের অন্দর থেকে প্রায় সারা জেলাতেই নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গ্রামোন্নয়নের কাজ করেন। ঠিক তেমনভাবেই সেলুলয়েডেও সাবলীল সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। জাস্ট স্টুডিও প্রযোজিত ‘পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ’ নামে বাংলা ছবিতে অভিনয় করছেন তিনি। শুক্রবার রঘুনাথপুর থানার নিলডি পাহাড়ের কোলে নতুন বাংলা ছবির এই এই দৃশ্যটির শুটিং করেন পরিচালক রাজর্ষি দে।
বুল্লা খাঁ-র চরিত্রে অভিনয় করে সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দেন রাজনীতির আঙিনায় তিনি যেমন সফল, তেমনই এই অভিনয় জগতেও তিনি একেবারে স্বচ্ছন্দ। আসলে কলেজ জীবন থেকেই তিনি নাটক করতেন। এখন সেভাবে রেওয়াজ না হলেও মাঝেমধ্যেই মঞ্চে নেমে পড়েন। এই তো পুজোর আগে মানবাজারের একটি স্কুলে ‘কর্ণকুন্তি সংবাদ’ পাঠ করে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন। এদিনও নিলডির ন্যাড়া পাহাড়ের ল্যান্ড স্কেপে যেভাবে ঘোড়া ছোটালেন তাতে মনে হল যেন সত্যিই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমলে নিযুক্ত সৈনিক বুল্লা খাঁ। সভাধিপতির কথায়, “টলিউড সিনেমার শুটিংয়ের ক্ষেত্রে এখন অন্যতম ঠিকানা হয়ে উঠেছে পুরুলিয়া। আসলে পরিচালকরা অতীতে এই জেলাকে সেভাবে আবিষ্কারই করতে পারেনি। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত তাঁর একের পর এক ছবির শুটিং এখানে করায় এখন টলিউডের অন্যতম গন্তব্য হয়ে গিয়েছে এই জেলা। এখানকার যা ল্যান্ডস্কেপ তাতে যেদিকেই ক্যামেরা পাতা হোক না কেন একটা ফ্রেম হয়ে যায়।’’ এই চরিত্রে অভিনয় করে বেশ ভাল লেগেছে বলেও জানান তিনি৷
১৮ ডিসেম্বর থেকে ওই প্রযোজনা সংস্থা তাদের নতুন বাংলা ছবির জন্য এই জেলায় তাঁবু ফেলে। মূলত তিনটি ছোট গল্প নিয়ে তৈরি ‘পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ’৷ একটি ট্রেন সফর এই তিনটি ছোট গল্পকে জুড়ছে। যে ট্রেন সফরে রয়েছেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ও অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। ওই তিনটি ছোট গল্পের চরিত্রেই আছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কৃষ্ণানন্দ আগমবাগিশ নামে এক তন্ত্রসাধকের চরিত্রে অভিনয় করছেন। পরিচালক রাজর্ষি দে-র কথায়, “ওই তন্ত্রসাধক তাঁর সাধনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করছেন। তারপর তিনি চলে যাচ্ছেন। এই ছবির মাধ্যমে আমাদের বার্তা এটাই তন্ত্র সাধনার ভাল দিকগুলো আমরা গ্রহণ করব। এই তন্ত্র যাতে খারাপ কাজে প্রয়োগ না হয়। এই ছবিতে আমরা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে একটি চরিত্র দিয়েছি। তিনি দারুণ কাজ করেছেন।” গল্পকার অভীক সরকারের ‘এবং ইনকুইজিশন’-র চারটে গল্প থেকে তিনটি নিয়ে এই ছবি তৈরি হচ্ছে বলে জানান ছবির প্রযোজক সুচন্দ্রা ভানিয়া। আগামী মে মাসে ছবিটি মুক্তি পাবে।
ছবি: অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.