বাবুল হক, মালদহ: অশরীরী আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না আদিবাসীদের। বছর পঁচিশ আগে সুখানদিঘি গ্রামে ‘ডাইনি’ সন্দেহে একই পরিবারের ছয়জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। ঘটনার দীর্ঘদিন পর সুখানদিঘি সংলগ্ন বাসুদেবপুর এখন জনমানবহীন। গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন প্রায় সকলেই। একের পর এক সমস্ত বাড়িতে তালা ঝুলছে। যেন শশ্মানের নিস্তব্ধতা গোটা গ্রামে।
[আরও পড়ুন: এখনও শুনশান ভাটপাড়া, আজই পরিদর্শনে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল]
কিন্তু কারণ কী? জানা গিয়েছে, এক মাসের ব্যবধানে পরপর ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে ওই গ্রামে। আর এতেই গ্রামে অশরীরীর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, ‘ভুতে’ নাকি খেয়ে ফেলছে মানুষদের। এই কথা রটতেই মালদহের বাসুদেবপুর গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। হাতেগোনা কয়েকজন রয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁরাও রাতে বাড়িতে থাকেন না। যদিও বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর এখনও পর্যন্ত ওই গ্রাম পঞ্চায়েত অথবা প্রশাসনের কোনও কর্তা ঘটনাস্থলে যাননি, অভিযোগ স্থানীয়দের।
পুরো বিষয়টি কুসংস্কার এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর কৌশল বলে মনে করছে ভাবুক পঞ্চায়েতের আধিকারিকরা। মালদহের জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “এই ধরনের কিছু জানা নেই। ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।” মালদহ শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে নারায়ণপুর। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ছেড়ে ডান দিকে আরও অন্তত তিন কিলোমিটার। সেখানেই সুখানদিঘি। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় আরও কিলোমিটার খানেক এগোলেই সোনাঝুরি মোড়। ডান দিকে আরও এক কিলোমিটার। তারপর পাঁচপুকুর। খানিকটা গিয়েই বাসুদেবপুর। স্থানীয়রা বসতপুর বলেন। গ্রামে ঢোকার মুখেই তিনটি পরিবার রয়েছেন যাঁরা এখনও ভূতের ভয়ে পালিয়ে যাননি। কিন্তু তাঁরাও রাতে বাড়িতে থাকতে পারছেন না।
[আরও পড়ুন: প্রয়োজনে নতুন মুখ এনে ঘুরে দাঁড়াতে হবে, নদিয়ার পর্যালোচনা বৈঠকে কড়া মমতা]
পাঁচপুকুর থেকেই নাকি ভুত উঠে আসছে। বাড়িতে ঢুকলেই কারও অসুখ অনিবার্য। সঙ্গে মৃত্যুও। আর এমন অন্ধবিশ্বাস থেকেই গোটা গ্রাম এখন মানুষশূন্য। শুক্রবার বিকেলে এমনই অন্ধ কুসংস্কার উপলব্ধি করা গেল বাসুদেবপুরে। খাঁ খাঁ করছে গোটা গ্রাম। অধিকাংশ মাটি, টালির বাড়িতে তালা ঝুলছে। ভূত নাকি তাণ্ডব চালাচ্ছে গ্রামে। সন্ধ্যার পর নানা রকমের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন বাসিন্দারা। তা নিয়ে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। জানা গিয়েছে, ওই গ্রামে ৩০টি পরিবার রয়েছে। এই মৃত্যুর ঘটনার পর ‘ভূত’ আতঙ্কে সেখান থেকে ২৭টি পরিবার বাড়িতে তালা মেরে অন্যত্র চলে গিয়েছেন।
গ্রামবাসীদের ধারনা, যাদের মৃত্যু হয়েছে ভূতে ধরেছিল ওঁদের। মৃত সিংরায় কিস্কুর এক দাদা মাতু কিস্কু বলেন, “আমার ভাইয়ের পেটে যন্ত্রণা হয়। আর তার কয়েক দিনের মধ্যে সে মারা যায়। একই রকম ভাবে পর পর ছয়জন গ্রামে মারা গিয়েছে। গ্রামের সুস্থ-সবল মানুষদের হঠাৎ করে এরকম ভাবে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পরই ভূত আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সবাই বলছে গ্রামে নাকি ভূত ভর করেছে।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য গৌতম পাহান বলেন, “বাসুদেবপুর গ্রামে আদিবাসীদের মধ্যে একটা ‘ভূত’ আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ভূতের ভয়ে গ্রাম ছেড়েছেন অনেকে বলে শুনেছি। এটা নিছকই একটা কুসংস্কার। সে ব্যাপারেও গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.