নন্দন দত্ত, সিউড়ি: প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল আগে। অনেক লড়াই করেই গরু পাচার মামলায় (Cattle Smuggling) বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরার অনুমতি পেয়েছিল ইডি। তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার জমি তৈরি ছিল। কিন্তু শেষবেলায় তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলেরই এক কর্মীর দায়ের করা মামলা ইডির সাজানো চিত্রনাট্য ঘেঁটে দিল। মঙ্গলবার ভোরে ইডি (ED) আধিকারিকদের ঘেরাটোপে দিল্লি যাওয়ার বদলে অনুব্রত মণ্ডল পা রাখলেন নিজের জেলায়। আসানসোল সংশোধনাগার থেকে তাঁকে সকালে নিয়ে যাওয়া হল দুবরাজপুরে। ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন তিনি। অর্থাৎ দিল্লি যাত্রা আপাতত স্থগিত। এমন নাটকীয় পট পরিবর্তনের পর সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, কে ওই তৃণমূল (TMC) কর্মী শিবদাস মণ্ডল? যাঁর অভিযোগ আসলে শাপে বর হয়ে এল বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতার এমন টালমাটাল পরিস্থিতিতে?
শিবঠাকুর মণ্ডল দুবরাজপুরের (Dubrajpur) বালিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান। বর্তমানে তিনি সাধারণ তৃণমূল কর্মী। ২০১৫ সালে শিবঠাকুর প্রধান হওয়ার ২ বছর পর তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন বিরোধীরা। সেবার পদচ্যুতি হলেও ছ’মাসের মধ্যে পদ ফিরে পান। এরপর ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ওই আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হয়। ফলে শিবঠাকুর মণ্ডল আর নির্বাচনে লড়তে পারেননি। তিনি নিজের পঞ্চায়েত এলাকার জন্য ৫ টি আসন চেয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডলের কাছে। কিন্তু পেয়েছেন মাত্র ২টি। সেই থেকে দলের জেলা সভাপতির উপর মনক্ষুণ্ণ শিবঠাকুর।
এরপর একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শিবঠাকুর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাওয়া মনস্থ করেছিলেন। কিন্তু সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান অনুব্রত (Anubrata Mandal) নিজেই। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলে তৃণমূল কর্মী জানিয়েছেন, ”সেবার দুবরাজপুরের পার্টি অফিসে কেষ্টদা আমাকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, কেন দল ছেড়ে দিতে চাইছিস? আমি পালটা বললাম, কেন দল করব? কী পেয়েছি দল থেকে? তখন কেষ্টদা বলেন, ওসব বাদ দে, দলটা তোকে করতে হবে, কাজ করতে হবে। তখন উনি দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। তাঁর মুখে উপর কিছু বলার সাহস ছিল না।” শিবঠাকুরের আরও অভিযোগ, এরপরও নাকি একবার তাঁকে ডেকে গলা টিপে ধরেছিলেন অনুব্রত। কিন্তু অভিযোগ জানাননি কোথাও।
তাহলে এখন কেন পুরনো বিবাদ উসকে দিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে শিবঠাকুর স্পষ্টই বলেন, ”আমি ঠাকুরভক্ত মানুষ। ঠাকুরকে ডাকতাম যে কবে এসব প্রকাশ্যে বলতে পারব? এখন তো উনি জেলে। এই সুযোগে আমি সাহস সঞ্চয় করে দুবরাজপুর থানায় এসে সোমবার অভিযোগ জানালাম। আমি চাই, ওঁর কঠিন শাস্তি হোক।” মনের ক্ষোভ তো এভাবে মেটালেন শিবঠাকুর। উলটে অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লি যাত্রা বিলম্বিত হয়ে গেল। এ তো শাপে বরই! তবে শিবঠাকুরের এই বক্তব্য ঘিরে যথেষ্ট বিভ্রান্তির অবকাশ রয়েছে। এ বিষয়ে তৃণমূল মন্তব্য করতে নারাজ। দলের মুখপাত্র স্পষ্ট জানিয়েছেন, আইন মোতাবেক যা হওয়ার হয়েছে। কিছু বলার নেই। তবে বিরোধী দলের দাবি, দিল্লিতে অনুব্রতর ইডি হেফাজত বাঁচাতে এটা পুলিশ-তৃণমূলেরই সাজানো চিত্রনাট্য। কিন্তু তা অত্যন্ত দুর্বল।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.