Advertisement
Advertisement
বৃদ্ধাশ্রম

গণতন্ত্রেই আস্থা, ভোটের আবহে চনমনে শান্তিনিকেতনের ‘ভালবাসা’

সোমবার সকাল সকাল ভোট দেবেন ওঁরাও।

Shantiniketan: Residents of an old age home will cast their votes
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:April 28, 2019 10:05 pm
  • Updated:April 28, 2019 10:05 pm  

দীপঙ্কর মণ্ডল, বোলপুর: বয়সে সবাই প্রবীণ। কিন্তু মন এখনও সতেজ। কথা হচ্ছে বীরভূমের এক বৃদ্ধাশ্রমের। যেখানকার আবাসিকরা বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রের ভোটার। ভোট নিয়ে তাঁদের তুমুল উৎসাহ।

শান্তিনিকেতনের খোয়াই। সোনাঝুরির হাট থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ‘ভালবাসা’ নামে প্রবীণদের এই আবাসস্থল। গোধূলীর আলো কমে আসছিল। ভালবাসার উঠোনে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন। ৮১ বছরের মুকুল সেনের বাড়ি শান্তিনিকেতনের রতনপল্লিতে। বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোটার তিনি। নিজে স্কুটার চালিয়ে ভোট দিতে যাবেন ‘যুবক’ মুকুল। ডিভিসির অফিসার ছিলেন মুকুলবাবু। তিন মেয়ে কর্মসূত্রে বাইরে। এখন ঝাড়া হাত-পা। লাল মাটির পথে বেশ গতিতেই স্কুটার চালান মুকুলবাবু। বললেন, “বাড়িতে এখন তালা দেওয়া। আমার কোনও রোগ নেই। তবে সকাল বিকেল খাওয়া দাওয়া তো করতে হবে। তাই এখানে থাকা। সকাল সকাল ভোট দিয়ে ফিরে আসব ভালবাসায়।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াই বুথ দখল রুখবে মানুষ, মেদিনীপুরের সভা থেকে চ্যালেঞ্জ রূপার]

বৃদ্ধাশ্রম শুনলেই নচিকেতার সেই বিখ্যাত গানের কথা মনে পড়ে। যেখানে ভায়োলিনের করুণ সুরে এক মায়ের আর্তি- যে ছেলে তাঁকে প্রায় তাড়িয়ে দিয়েছিল তার সঙ্গেই আশ্রমের ঘরে থাকতে চান বৃদ্ধা। কিন্তু নচিকেতার কথা এখানে যেন বেসুরো। অদ্ভুত উচ্ছ্বাস সবার মধ্যে। কলকাতার পাইকপাড়ার বাসিন্দা বিদ্যুৎ ভৌমিক। বয়স ৬২। রেলের কর্মী ছিলেন। তাঁর কথায়, “জায়গাটি নির্জন। কোনও দূষণ নেই। আমি বিয়ে-থা করিনি। বাড়িতে দাদা বউদি আছেন। কিছু সামাজিক কাজ করি। পড়াশোনা করতে পছন্দ করি। আগে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতাম। এখানে কোনও ঝঞ্ঝাট নেই। বেশ শান্তিতেই আছি।” নির্দিষ্ট দিনে বাড়ি গিয়ে উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে ভোট দেবেন বিদ্যুৎবাবু। ভোটে অংশ নেবেন নাগেরবাজার থেকে সস্ত্রীক আসা তপন পাইন ও ডলি পাইন। নিজের দমদম কেন্দ্রে কারা প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন গড়গড় করে বলে গেলেন। গণতন্ত্রে আস্থা অটুট পাইন দম্পতির। বললেন, “বাড়িতে ছেলে-বউমা ও নাতি আছে। তারা একটু নিজেদের মতো সময় কাটাক। আমরা প্রতিমাসে বাড়ি যাই। ভোটের অন্তত দু’দিন আগে যাব।”

old-age-home

কাকতালীয়ভাবে এই প্রতিষ্ঠানের জন্মদিন ২৯ এপ্রিল। এইদিনেই বোলপুর ও বীরভূম কেন্দ্রে ভোট। ভালোবাসার তরফে কামদেব গোস্বামী জানালেন, উদযাপন অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১ মে অনুষ্ঠান হবে। সঙ্গীতে শুভেন্দু মাইতি, নাট্যাংশ পাঠে অভিনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায়, কথানাট্যে দেবেশ ঠাকুর-সহ বিশিষ্টরা অংশ নেবেন সেই অনুষ্ঠানে। আবাসিকরা তা নিয়ে মহা ব্যস্ত। ওইদিন কে কোন পোশাক পরবেন তা নিয়েও চলছে আলোচনা। তবে আড্ডায় ঘুরে ফিরে আসছে লোকসভা ভোটের কথা। এক প্রবীন বলছিলেন, বিশাখা নক্ষত্র এই সময় সূর্যের গা ঘেঁষে থাকে। তা থেকেই বাংলার প্রথম মাসের নাম বৈশাখ। লাল মাটির বীরভূমে এখন
দিনভর দাবদাহ। কিছুক্ষণ বাইরে থাকলে গোটা শরীর জ্বলতে থাকে। সান্ধ্যকালীন আড্ডার সময় প্রকৃতি বেশ ঠান্ডা। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা জমে ওঠে। এই জেলায় হিংসার কথাও বাদ থাকে না আলোচনায়।

[আরও পড়ুন: বিতর্কিত মন্তব্যের জের, মঙ্গলবার পর্যন্ত অনুব্রতকে নজরবন্দির নির্দেশ কমিশনের]

পুরুলিয়া থেকে আসা বেলা মুখোপাধ্যায় বললেন, “গত বিধানসভা ভোট পর্যন্ত বুথে গিয়েছি। কিন্তু এবার যা গরম পড়ছে। আর শরীরটাও ভাল না। তাই এবার আর ভোট দিতে যাব না।” প্রবীণদের আলোচনায় উঠে আসে গত পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গ। আবাসিকদের কথায়, বেশিরভাগ মানুষ পঞ্চায়েতে ভোট দিতে পারেননি। লোকসভা নির্বাচনে সেই রাগ কাজ করতে পারে। ২৩মে ফল। তা নিয়েও অপেক্ষা করবে ভালবাসা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement