নিজস্ব সংবাদদাতা,বনগাঁ: রাজ্যের অধিকাংশ কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের মনোনীত প্রার্থী নিয়ে স্থানীয় নেতা,কর্মীদের অসন্তোষ পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি৷ এই পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশে বেশ সাবধানী হয়েছেন দিল্লি নেতারা৷ মঙ্গলবার বিজেপির দ্বিতীয় প্রার্থীতালিকা প্রকাশিত হয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের কথায় গুরুত্ব দিয়ে৷ আর সেই কারণেই বনগাঁ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছে ঠাকুরবাড়ির বহু আলোচিত সদস্য, সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরকে৷
মঙ্গলবার সন্ধেবেলা দ্বিতীয় দফার প্রার্থীতালিকায় শান্তনু ঠাকুরের নাম প্রকাশিত হতেই মেতে ওঠেন মতুয়া সম্প্রদায়ের একাংশ৷ বনগাঁর ঠাকুরবাড়ির একদিকে একেবারে উৎসবের পরিবেশ৷ দলে দলে মতুয়া ভক্তরা সেখানে পৌঁছে শান্তনু ঠাকুরকে আশীর্বাদ করছেন, অভিনন্দন জানাচ্ছেন, মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন৷ বুধবার সকাল থেকেও একই আমেজ ঠাকুরবাড়িতে৷ ভক্তরা তাঁকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন৷ ভিড় জমছে ঠাকুরবাড়ির দালানে৷ নিজেদের দাবি পূরণ হওয়ায় এভাবেই আনন্দে মাতলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন৷ আর প্রার্থী নিজে জানাচ্ছেন, ভোটে জিতে উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানই হবে তাঁর মূল কাজ৷ রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে তাঁর সমালোচনা, ‘কাজ অনেক বাকি৷ মানুষের চাহিদা পূরণ হয়নি৷ সেই অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার দিকে মন দেব৷’
মতুয়া মহাসংঘের প্রতিষ্ঠাতা প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণের কনিষ্ঠ পুত্র শান্তনু৷ ইংরাজিতে স্নাতক হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা করেন৷ এমনিতে তিনি শান্ত স্বভাবের। মহাসংঘের সদ্যপ্রয়াত প্রধান উপদেষ্টা বীণাপানি দেবীর আশীর্বাদ এবং মহাসংঘের সব সদস্যের ইচ্ছায় বছর দুই আগে শান্তনু মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি হন। রাজনীতির লড়াইয়ে এই প্রথম৷ গত লোকসভা উপনির্বাচনে ঠাকুরবাড়ির বড় বউ তথা প্রাক্তন সাংসদ প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতাবালার কাছে দু’লক্ষেরও বেশি ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন শান্তনুর দাদা সুব্রত ঠাকুর৷ তারপর তিনি বিদেশে চলে যান৷ ঠাকুরবাড়ি অনেক দায়িত্ব পড়ে শান্তনুর উপর৷ সেইসঙ্গে মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতির চোরাস্রোতের মধ্যেও ঘটনাচক্রে ঢুকে পড়েন তিনি৷ সেই থেকে মতুয়াদের একাংশের অত্যন্ত পছন্দের ব্যক্তি শান্তনু৷ তাঁরাই বারবার শান্তনু ঠাকুরকে বিজেপি প্রার্থী করার দাবি তুলতে থাকেন৷ ঠাকুরবাড়ির ছোট ছেলে প্রাথমিকভাবে ভোটে লড়তে আপত্তি জানালেও, পরে বলেন, ‘ভক্তরা যা চাইবেন, তাই হবে৷’
মতুয়া ভোটব্যাংকের কথা মাথায় রেখে সম্প্রদায়ের একাংশের দাবি মেনেই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব বনগাঁ কেন্দ্রে শান্তনু ঠাকুরের নামে সিলমোহর দিয়েছে৷ এদিক, তৃণমূলের প্রার্থী ঠাকুবাড়ির বউমা মমতাবালা ঠাকুর৷ ফলে পরিবারের মধ্যে ফের রাজনৈতিক লড়াইয়ের সাক্ষী হতে চলেছে বনগাঁ৷ মঙ্গলবার প্রার্থী হিসেবে শান্তনু ঠাকুরের নাম ঘোষণার পর তাঁর প্রতিপক্ষ তথা জেঠিমা মমতাবালার প্রতিক্রিয়া, ‘জানতাম, শান্তনু প্রার্থী হবে৷ ও ভীষণ লোভী৷ শান্তনু এতদিন মতুয়া ভক্তদের মিথ্যা কথা বলেছেন, তাই ভক্তরা আগামী দিনে তাঁকে জবাব দেবেন৷ কোনও মতুয়া ভক্ত তাঁর সঙ্গে থাকবেন না।’ আর তৃণমূল প্রার্থীর এই সমালোচনার জবাবে শান্তনুর আত্মবিশ্বাসী বক্তব্য, ‘ওরা জানে, আমি ভোটে দাঁড়ালে তৃণমূল প্রার্থীর মান অনেক নিচে নেমে যায়৷ তাই ওরা ইচ্ছা করেই বিক্ষোভ করছে৷’ আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটপ্রচার শুরু করবেন ঠাকুরবাড়ির আরাধ্যা দেবতাকে পুজো দিয়ে, তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে৷
একদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঠাকুরবাড়ির সুসম্পর্ক, বনগাঁর সামগ্রিক উন্নয়নে সরকারের কাজ আর অন্যদিকে মতুয়াদের নাগরিকত্ব ঘিরে বিজেপির কৌশলী প্রতিশ্রুতি – এই দুটি ইস্যুকে সামনে রেখেই বনগাঁ কেন্দ্রের লড়াই হবে বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের একাংশের৷ আর এই লড়াই ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত মতুয়া সম্প্রদায়ও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.