ফাইল ছবি।
অর্ণব আইচ ও দিব্যেন্দু মজুমদার: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জারি ধরপাকড়। এবার গ্রেপ্তার শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন শীল। রবিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে ইডি। প্রায় ৩৭ ঘণ্টা তাঁর বাড়িতে তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর অয়নকে সঙ্গে নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে আসেন আধিকারিকরা।
বছর তিনেক আগে সল্টলেকের এফডি ব্লকে প্রযোজনা সংস্থা তৈরির নাম করেই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন অয়ন শীল। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে ধৃত বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুর্নীতির শিক্ষাগুরু’ অয়ন শীল যে প্রযোজনা সংস্থার আড়ালে তৈরি করেছিলেন প্রোমোটিং ব্যবসার বিশাল নেটওয়ার্ক। শনিবার বিকেল থেকে রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত অয়ন শীলের ভাড়া নেওয়া অফিস তথা লাগোয়া থাকার ঘরে তল্লাশি চালান ইডি আধিকারিকরা। তল্লাশি চালিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, প্রোমোটিং ব্যবসার আড়ালে সল্টলেকের অফিসে বসে অয়ন চালাতেন নিয়োগ দুর্নীতির কারবারও। অয়নের অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় চারশো ওএমআর শিট। মিলেছে প্রচুর অ্যাডমিট কার্ডের কপি। সাতটি কম্পিউটার থেকে পাওয়া গিয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেনের হিসাব। সন্ধান মিলেছে প্রায় দশটি বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের। শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের দুর্নীতি ছাড়াও বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে যে অয়ন সরাসরি যুক্ত ছিলেন, সেই ব্যাপারেও বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছে ইডি।
ইডি’র মতে, এই লেনদেনের পরিমাণ ৬০ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। ওই লেনদেনের মধ্যে কত টাকা নিয়োগ দুর্নীতির, সেই ব্যাপারে জানতে অয়নকে টানা জেরা করা হয়। এই দুর্নীতির ব্যাপারে অয়ন শীলের সঙ্গে কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগাযোগ ঘিরেও চলছে তদন্ত। ইডি’র এক আধিকারিক জানান, তাঁকে আটক করে জেরার পর নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল টাকা অয়নের কাছে বিভিন্নভাবে এসেছে বলে তাঁদের সন্দেহ। তাই অয়নের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। শনিবার শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ও গেস্ট হাউসে তল্লাশি চালানোর পর তাঁর আরও অন্তত দশটি সম্পত্তির হদিশ মেলে। তার মধ্যে রয়েছে কয়েকটি ফ্ল্যাট, যেগুলির প্রোমোটিং করেছেন অয়ন শীল। শনিবার রাতে অয়নকে সল্টলেকের অফিসে নিয়ে এসে তল্লাশি চালায় ইডি।
প্রাথমিকভাবে ইডি জেনেছে, প্রায় ৪০টি জায়গায় প্রোমোটিং করেছেন অয়ন। টলিউডের একাধিক সিনেমায় প্রযোজনা করে কালো টাকা সাদা করেছেন। সেই সূত্র ধরে কুন্তল ঘোষের মতো অয়ন শীলেরও টলিউডের তারকাদের সঙ্গে পরিচিতি ছিল বলেই ধারণা ইডি’র। কুন্তলের মতো তিনি কোনও তারকাকে টাকা দিয়েছিলেন কি না, সেই ব্যাপারেও তাঁকে জেরা করা হয়। ইডি তাঁর অফিসের ড্রয়ার, জামাকাপড়ের আলমারি, খাটের তলা, ওয়ারড্রোবের ভিতর থেকে উদ্ধার করেছে প্রায় চারশো ওএমআর শিট, বহু অ্যাডমিট কার্ডের কপি, বৈদ্যুতিন নথি ও অন্যান্য নথিও। একজন প্রোমোটারের অফিস থেকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির নথি উদ্ধারে উঠেছে প্রশ্ন। এছাড়াও উদ্ধার হয়েছে প্রচুর কাগজের টুকরো বা ‘চিট’।
ওই ‘চিট’-এ লেখা রয়েছে টাকার হিসাব ও টাকার পরিমাণ। ফলে হাওলার কায়দায় অয়ন টাকা সরাতেন কি না, তা নিয়েও চলছে ইডির তদন্ত। এছাড়াও কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক পরীক্ষা করে ইডি সন্ধান পেয়েছে বিভিন্ন পুরসভার অজস্র বিজ্ঞাপনের। এ ছাড়াও কম্পিউটারে রয়েছে বহু চাকরিপ্রার্থীর নাম ও অন্যান্য বিবরণ। ফলে হুগলি ও বিভিন্ন জেলার পুরসভা এবং অন্যান্য সরকারি দফতরে নিয়োগের ক্ষেত্রেও অয়ন শীল বিপুল টাকা নিতেন বলে অভিযোগ ইডির। সেই সূত্র ধরে অয়ন একাধিক পুরসভার কর্তা-সহ কয়েকজন প্রভাবশালীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বলেই ইডি আধিকারিকদের সন্দেহ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.