নিজস্ব সংবাদদাতা: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনয় ভবনের এডুকেশন বিভাগে দুই ছাত্রীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠল ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে৷ দু’জনই বিশ্বভারতী উপাচার্যকে প্রথমে অভিযোগ করেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়৷ বিভাগীয় প্রধান রাজর্ষি রায় অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করেছেন৷
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতীর বিনয় ভবনে এডুকেশন বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের তৃতীয় সেমেস্টারে পড়েন দুই ছাত্রী৷ একজনের বাড়ি হুগলি, অন্যজনের বর্ধমান৷ দু’জনেই এখানে মেসে থাকেন৷ হুগলি থেকে আসা ছাত্রীটি বিশ্বভারতী গণিত বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন৷ গণিত বিভাগের অন্যতম সফল ছাত্রীটি এডুকেশন বিভাগে এমএড-এ ভর্তি হয়৷ অভিযোগ, প্রথম বর্ষ থেকেই এডুকেশন বিভাগের প্রধান রাজর্ষি রায় তাঁকে তার মেয়েকে টিউশন পড়ানোর প্রস্তাব দেন৷ এতে রাজর্ষিবাবু ও তার পরিবারের সঙ্গে ছাত্রীটির ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়৷ আর এর সুযোগ নিয়ে ছাত্রীটিকে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফোনে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করেন রাজর্ষিবাবু৷ এমনকী, ছাত্রীটির ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ, তাঁকে বিভিন্ন অশালীন ইঙ্গিতপূর্ণ মেসেজ পাঠাতে থাকেন রাজর্ষিবাবু, এমনই অভিযোগ ছাত্রীটির৷ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, ছাত্রী রাজর্ষিবাবুর মেয়েকে টিউশন পড়ানো বন্ধ করে দেন এবং ফোন, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে ছাত্রীটি রাজর্ষিবাবুকে ব্লক করে দেন৷ আর এতেই চটে যান রাজর্ষিবাবু৷ এর পরেই বিভিন্নভাবে ছাত্রীটিকে হেনস্তা শুরু করেন৷
পুজোর ছুটির পর বিভাগে যোগ দিলে হেনস্তা চরমে ওঠে৷ ছাত্রীর অভিযোগ, ক্লাসে কোনও প্রশ্ন করলে তাঁকে কোনও উত্তর দেওয়া হত না৷ বিভিন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলা হত৷ এমনকী তাঁর পেটে সিস্ট হয়েছিল, সে বিষয়টি নিয়ে অশালীন মন্তব্যকে করেন রাজর্ষিবাবু৷ এর মধ্যে এমএড-এর তৃতীয় সেমেস্টার পরীক্ষার জন্য ক্লাসে ৬০ শতাংশ উপস্থিতি নেই বলে বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা আটকে দেওয়া হয়৷ অভিযোগকারী ছাত্রীটির ৫৯ শতাংশ উপস্থিতি ছিল বলে দাবি৷ উপস্থিত না থাকতে পারার জন্য ডাক্তারি সার্টিফিকেটও জমা দেন ওই ছাত্রী৷ কিন্তু রাজর্ষিবাবু ছাত্রীকে ডেকে কুপ্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ৷
একইভাবে, দ্বিতীয় ছাত্রীটির ৬০ শতাংশ উপস্থিতি না থাকার জন্য তাকে আটকে দেওয়া হয়৷ দ্বিতীয় ছাত্রীটির অভিযোগ, “আমি রাজর্ষিবাবুকে জানাই, আমার পক্স হয়েছিল৷ তখন রাজর্ষিবাবু বলেন তোমার মুখে তো কোনও দাগ নেই, শরীরে কোথাও দাগ থাকলে দেখাও৷” এর পরই দুই ছাত্রী ১৫ নভেম্বর বিনয় ভবনের অধ্যক্ষ সবুজকলি সেনকে লিখিত অভিযোগ জানান৷ সেইদিনই অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্তর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ কিন্তু উপাচার্য না থাকার জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অমিত হাজরা কোনও ব্যবস্থা নেননি৷ ১৮ তারিখে সকালে হুগলির ছাত্রীটিকে উপাচার্য মেল করে জানিয়ে দেন, তিনি পরীক্ষায় বসতে পারবেন৷ দ্বিতীয় ছাত্রীর বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷ অভিযোগগুলি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট কমিটি বা বিশাখা কমিটির কাছে পাঠানো হয়নি বলে অভিযোগ ছাত্রীদের৷
আর এর মধ্যে বিভাগীয় প্রধান রাজর্ষি রায়ের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য ২১ তারিখ দুই ছাত্রী শান্তিনিকেতন থানাতে অভিযোগ দায়ের করেন৷ কিন্তু প্রায় দু’দিন পার হওয়ার পরেও পুলিশ কোনও তদন্ত শুরু করেনি বলে অভিযোগ৷ এ সম্পর্কে বিনয় ভবনের অধ্যক্ষ সবুজকলি সেন জানান, “আমি দুই ছাত্রীর অভিযোগ পেয়েছি, সেই দিনই উপাচার্যের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি৷” ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অমিত হাজরা জানান, “আমরা অভিযোগ, দু’টি কমিটিতে পাঠিয়েছি৷ একজন ছাত্রী পরীক্ষা দিতে পারবে৷” যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই অধ্যাপক রাজর্ষি রায় জানান, “আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে৷ যাদের উপস্থিতি নেই তাদের বিরুদ্ধে আমি বিভাগে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলাম৷ আমি পুরো ঘটনা কোনও স্বাধীন সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের দাবি জানাচ্ছি৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.