দেবব্রত মণ্ডল ও সুরজিৎ দেব: ১০ বছর আগের স্মৃতি এখনও বিলীন হয়নি। আয়লার ক্ষত থেকে আজও পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেনি সুন্দরবন। আর শুক্রবার রাত থেকে অঝোরে বর্ষণ, ঝোড়ো হাওয়া আর আবহাওয়া দপ্তরের ঘনঘন পূর্বাভাস সেই স্মৃতিই উসকে দিচ্ছে সুন্দরবনবাসীকে। ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ধেয়ে আসার খবরে আতঙ্কে ভুগছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিভিন্ন দ্বীপের কয়েক লক্ষ মানুষ। আয়লার মতো বুলবুলও তাঁদের সর্বহারা করবে না তো, এই আশঙ্কায় প্রতি মুহূর্তে ভুগছেন তাঁরা।
মে, ২০০৯। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আয়লা আসার খবরে ঠিক একই রকম আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল সুন্দরবনে। সেই আতঙ্ক সত্যি করে দিয়ে আয়লা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছিল এই দ্বীপ জেলায়। যদিও বুলবুলের আগাম সর্তকতা হিসেবে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে জেলা প্রশাসন। বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকায় বহু মানুষকে নিচু জায়গা থেকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। গোসাবা ব্লকের বিভিন্ন এলাকার থেকে এইসব মানুষদেরকে সরিয়ে আনা হয়েছে বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে।
অন্যদিকে সাগর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, কুলতলি-সহ বিভিন্ন এলাকায় চালানো হচ্ছে বিশেষ নজরদারি। শনিবার ও রবিবার সুন্দরবনে পর্যটক নৌকা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সুন্দরবনের জঙ্গলের মধ্যে পর্যটকদের প্রবেশ এবং মৎস্যজীবীদের মাছ ধরা – কোনওটাই করা যাবে না। যে সমস্ত পর্যটকরা এই মুহূর্তে সুন্দরবনে আছেন, তাঁরা পাখিরালা, দয়াপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়েছেন। সেই সমস্ত এলাকায় পর্যটকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ট্যুর অপারেটরদের তরফ থেকে।জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের তরফে প্রচুর পরিমাণে পানীয় জল মজুদ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতির অবনতি হলে এই জল বিভিন্ন এলাকায় দ্রুততার সঙ্গে এসব বিলি করা হবে বলে দপ্তরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে জেলাশাসক পি উলগানাথান বলেন, ‘ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সমস্ত ব্লকগুলিতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। শুকনো খাবার মজুদ এবং বিভিন্ন এলাকায় ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে ঝড়ের দাপটে বেশ কিছু এলাকায় মাটির বাড়ি ধসে গিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গাছের ডাল পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে অবশ্য সেসব ডাল কেটে রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ করেছে প্রশাসনের কর্মীরাই।
এদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন উপকূলবর্তী এলাকায় আবহাওয়ার ক্রমেই অবনতি হয়েছে। চলছে ভারী বৃষ্টি, সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া। জেলাশাসক ড: পি উলগানাথন ও সুন্দরবনের পুলিশ সুপার বৈভব তেওয়ারি সহ সমস্ত মহকুমা ও ব্লক আধিকারিক এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের পদাধিকারিকরা উপকূলবর্তী সাগরদ্বীপ ও বকখালির বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.