নন্দন দত্ত, সিউড়ি: আনন্দ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল একই পরিবারের অন্তত সাত জনের। মৃতদের তালিকায় রয়েছে দুই শিশুও। শুক্রবার সন্ধ্যায় মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে মহম্মদবাজার থানার কালীতলা ও গণপুরের মাঝে চরিচার জঙ্গলে, ৬০
নম্বর জাতীয় সড়কের উপর। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷
মহম্মদবাজারের ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা একটি গাড়ি করে বহরমপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। সেখানে এক পৈতে বাড়িতে তাঁদের নিমন্ত্রণ ছিল৷উলটোদিক থেকে আসছিল রাজগ্রাম-সিউড়িগামী একটি বেসরকারি যাত্রীবাহী বাস। ফাঁকা রাস্তায় দুরন্ত গতিতে গাড়ি এবং বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই গাড়ি চালক মিঠুন-সহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। বাকিদের উদ্ধার করে সিউড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে, সেখানেই জখম দু’জনের মৃত্যু হয়। গাড়ির আরোহী ছাড়াও বাসের পাঁচ যাত্রী জখম হয়েছেন। তাঁদের সিউড়ি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, সিউড়ির বিধায়ক তথা রোগীকল্যাণই সমিতির চেয়ারম্যান অশোক
চট্টোপাধ্যায় সিউড়ি হাসপাতালে ছুটে যান। বিকাশবাবু জানান, জখমদের চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করা হবে হাসপাতালের তরফে।
অন্যদিকে, মহম্মদবাজারের কেওট পাড়ায় মৃত পরিবারের প্রধান শম্ভুনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য ফণীরঞ্জন রায়। তিনি বলেন,‘এমন এক বিপদের দিনে গোটা মহম্মদবাজার শোকাহত। আমরা তাঁদের পাশে আছি।’স্থানীয় সূত্রে খবর, রাওতাড়া গ্রামের রাহুল ভট্টাচার্যের গাড়িটি দু’দিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন মহম্মদবাজার এলাকার কেওট পাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় ভট্টাচার্য। শনিবার বহরমপুরের এক আত্মীয়ের পৈতে ছিল। সেখানে যাওয়ার জন্য বিকেল পাঁচটা নাগাদ গাড়িতে ভাই সন্দীপ, তার স্ত্রী, ছেলে-সহ সাতজনকে নিয়ে যাচ্ছিলেন পেশায় শিক্ষক সঞ্জয়বাবু। পরিবার সূত্রে জানা যায়, পরিবারের অন্যান্যরা আগেই বাসে করে বহরমপুরের দিকে রওনা দিয়েছিলেন। সঞ্জয়বাবুদের গাড়িতে রামপুরহাট থেকে আরও কয়েকজনকে নিয়ে বহরমপুর যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু কালীতলা থেকে গণপুরের দিকে যাওয়ার সময়ে ফাঁকা রাস্তায় গাড়ির গতি ছিল চরমে। উলটোদিক থেকে সাহিন নামে বেসরকারি বাসটি রাজগ্রাম থেকে সিউড়ির দিকে আসছিল দ্রুত গতিতে৷ একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাছে দু’টি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ বাঁধে৷ সাতজন যাত্রী নিয়ে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে চরিচার জঙ্গলে গাছে গিয়ে ধাক্কা মারে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় গাড়িটি৷ ভিতরের যাত্রীরা ছিটকে পড়েন জঙ্গলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে সকলের মৃত্যু হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ গিয়ে দেহগুলি উদ্ধার করে সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ চিকিৎসকরা পাঁচজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাকি দু’জনের মৃত্যু হয় হাসপাতালে। জখমদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে আনন্দ অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে পরিবারের এতজন সদস্যের একত্রে নিহত হওয়ার ঘটনায় শোকাচ্ছন্ন আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরাও৷
ছবি: শান্তনু দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.