নন্দন দত্ত, সিউড়ি: দেউচা পাচামিতে খনন যত গভীর হচ্ছে অশান্তির ছক যেন ততই বাড়ছে। সামাজিক সংগঠনের নামে বহিরাগতরা এলাকায় ঢুকছে বলেই অভিযোগ। লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকে অস্ত্র-সহ জেলায় ঢুকে গোলমাল পাকানোর পরিকল্পনা চলছে। তাই ঝাড়খণ্ড সীমানায় বাড়ানো হল নজরদারি। চালু হল চারটি নতুন নাকা চেকিংকেন্দ্র। সেখানে অস্ত্র-সহ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ রাতে নিজে একা গিয়ে সেই কেন্দ্র পরীক্ষা করেন। পুলিশ সুপার জানান, “বাংলা ও ঝাড়খণ্ড বরাবর বিশাল খোলা সীমানা। নজরদারি বাড়ানোর জন্য আগের নাকা চেকিং কেন্দ্রের সঙ্গে আরও নতুন করে চারটি কেন্দ্র বাড়ানো হল।”
বাংলার সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের প্রায় ২০ কিলোমিটার ধরে অরক্ষিত সীমানা। দুই রাজ্যের মানুষ স্বাভাবিকভাবেই যাতায়ত করে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু খনি বিরোধী উগ্রবাদী সংগঠন ঝাড়খন্ড হয়ে বীরভূমে বিশেষ করে মহম্মদবাজারের দেউচা-পাঁচামিতে ঢোকার চেষ্টা করছে।সীমানা পাহাড়ায় তাই আগে থেকেই ছাগলাকুড়ি,বনপাড়া,রামাপাড়া,মুরালপুর, কামার নবগ্রাম ও উপরজোলে মহম্মদবাজার থানার পক্ষ থেকে নাকাচেকিং ক্যাম্প আছে। সবগুলিতে একজন অফিসারের সঙ্গে দু জন পুলিশ ও ২ জন করে সিভিককে সারাদিন রাত পাহারায় রাখা হয়েছে। এরপরেও দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদা থেকে হাটগাছা এলাকায় বহিরাগত লোক ঢোকানোর অভিযোগ ওঠে এক আদিবাসী নেতারা নামে। বহিরাগতদের নিয়ে হাটগাছায় তারা আম্বেদকরের জন্মদিন পালন করে।সংগঠন চালানোর নাম করে এলাকার খাদান ও পাথরকল মালিকদের কাছ থেকে মোটা পরিমাণ টাকা তোলা হচ্ছে। হাটগাছা এলাকায় ওই আদিবাসী নেতার জামাইয়ের বাড়ি। সেই বাড়ি আসার নাম করে বহিরাগতদের নিয়ে আসছে।
পুলিশের তরফে সাগরবান্দি গ্রামে সুচিত্রা মুখোপাধ্যায় নামে একজন মহিলার উপর নজরদারি রেখেছে। কারণ, সাগরবান্দি এলাকায় পাথরের চারাইয়ের নামে এলাকায় বিবাদ লাগিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করছে। আদিবাসী নন অথচ তিনি এলাকায় আদিবাসী উন্নয়নে কেন আসছে সে নিয়ে আদিবাসী গ্রুপ গুলিতে লেখালেখি শুরু হয়েছে। সম্প্রতি দেউচা-পাঁচামি ঘুরে গিয়েছে ইউনাইটেড ফোরাম অফ অল আদিবাসী ইউনিয়ন। তার আগে এলাকায় অশান্তির পাকানোর আশঙ্কায় আদিবাসী ভূমিরক্ষা কমিটির বৈদ্যনাথ মুর্মু-সহ কয়েকজনকে বোলপুরেই আটকে রাখা হয়। শিবু সরেঙ্কে একইভাবে বোলপুরে আটকে রাখা হয়। নিজেদের গ্রুপে আদিবাসীরা কেউ কেউ এদের নিয়ে পোস্টার লিখছে। তারা কলকাতার দুই বাসিন্দাকে মাওবাদী বলে তাদের থেকে সতর্ক থাকতে বলেছে। তারা যে অস্ত্র সহ এলাকায় ঢুকতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক করে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টার দিয়েছে।
গত মাসে ঝাড়খণ্ড থেকে অস্ত্র-সহ মহম্মদবাজারে ঢোকার মুখে এক আদিবাসী নেতাকে গ্রেপ্তার করে ঝাড়খণ্ডের শিকারী পাড়ার পুলিশ। তাই এই মুহূর্তে দেউচা-পাঁচামির স্বার্থে মহম্মদবাজারের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে জেলা প্রশাসন। যদিও মহম্মদবাজারের নিরাপত্তা বাড়াতে রামপুরে ও পাঁচামিতে দুটি পুলিশ থানা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু তা কবে রূপায়ণ হবে তা এখনও রাজ্যের তরফে নিশ্চিত করা হয়নি। তাই পুলিশের তরফে কাঠপাহাড়ি, শালডাঙ্গা, ঢোলকাটা-কলকলি ও শোলাগড়িয়ায় চারটি নতুন নাকাচেকিং সেন্টার খোলা হয়েছে। গত মাসে তারাপীঠে দুমকা ও বীরভূমের জেলা পুলিশ সুপার মিলে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন।জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ জানান, “গ্রামের ভিতর দিয়ে, জনপদ দিয়ে বীরভূমের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের খোলা সীমানা। মাঠে মাঠেও হেঁটে লোক যাতায়ত করে। তবুও আমরা সবদিক থেকে নজরদারি করছি। যাতে বহিরাগত কেউ এসে দেউচা-পাঁচামিতে অশান্তি না করতে পারে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.