চন্দ্রজিৎ মজুমদার, কান্দি: ৭৮ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন দেশের অন্যতম বিজ্ঞান সাধক বিকাশ সিনহা। বিজ্ঞানী মহলে শোকের ছায়া স্বাভাবিক। কিন্তু পাশাপাশি তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ কান্দি। এখানকারই ভূমিপুত্র ছিলেন বিজ্ঞানী বিকাশ সিনহা (Bikash Sinha)। শুধু তাই নয়, কান্দি রাজপরিবারের পুত্রের দৌলতেই কান্দিতে (Kandi) শিক্ষা বিস্তারের কাজ হয়েছিল অনেকটাই। তাই তাঁর এভাবে চলে যাওয়া কান্দির বড় ক্ষতি বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আমজনতা থেকে পড়ুয়া, স্কুলশিক্ষক থেকে বিধায়ক – বিজ্ঞানী বিকাশ সিনহার মৃত্যুতে সকলেই মুহ্যমান।
বিকাশ সিনহা কান্দি রাজপরিবারের সন্তান। স্কুলজীবন কেটেছে কান্দিতেই। বাবার নাম বৃন্দাবন সিনহা। তুতো দাদা অতীশ সিনহা কান্দির ৪ বারের বিধায়ক (MLA) ছিলেন। মূলত তাঁদের প্রয়াসেই কান্দি রাজ উচ্চ বিদ্যালয়, রাজ কলেজ তৈরি হয়। এলাকার শিক্ষা বিস্তারে তাঁদেরই ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। পদার্থবিদ্যা নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় আসেন বিজ্ঞানী বিকাশ সিনহা। তারপর এখানেই গবেষণা, কেরিয়ার, খ্যাতিলাভ। পরবর্তী সময়ে তিনি লন্ডনেও যান। কিন্তু মাটির টানে ফিরে আসেন এই বাংলাতেই। সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের (SINP) সঙ্গে আজীবন যুক্ত থাকা বিজ্ঞানীকে ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করে কেন্দ্র।
তিনি রাজ পরিবারের সন্তান হওয়ায় কান্দি রাজ কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলেন আজীবন। কান্দি উচ্চবিদ্যালয়েও একই পদে ছিলেন। তবে সম্প্রতি অসুস্থতা বাড়তে থাকায় সেভাবে কাজ করতে পারছিলেন না বিজ্ঞানী। সেই কারণে উচ্চবিদ্যালয়ের পদটি ছেড়ে দেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভূমানন্দ সিংহের কথায়, ”বিজ্ঞানীর মৃত্যু কান্দিবাসীর বড় ক্ষতি। এত কাছ থেকে ওঁকে দেখেছি আমরা…কর্মসূত্রে একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছি। আর তা হবে না। বড় আক্ষেপের বিষয়।” কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলছেন, ”বিধায়ক হওয়ার পর থেকে ওঁর সঙ্গে একটা বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়। উপদেশ নিতাম বিভিন্ন কাজের জন্য। সেসব খুব মূল্যবান, ওজনদার। আজ আরও বেশি করে তা বুঝতে পারছি। আমাদের এখানকার ভূমিপুত্র, খ্যাতনামা বিজ্ঞানীর প্রয়াণে শোকাহত কান্দি।”
কান্দিতে সিনহা রাজবাড়িতে এখন শুনশান। পরিবারের কেউ থাকেন না। একজন কেয়ারটেকারের উপরই দেখভালের ভার দেওয়া। মাঝেমাঝে অবশ্য আসতেন বিকাশবাবু। আগে থেকে জানিয়ে রাখতেন। কেয়ারটেকারকে বলতেন, রান্নাবান্না করে ঘর গুছিয়ে রাখতে। একদিনের জন্য আসতেন। কিন্তু তাতেই আনন্দের যেন সীমা থাকত না। তিনি নিজে যেমন খুশি হতেন, তেমনই আশপাশের মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। এমন প্রাণবন্ত মানুষটার মৃত্যু তাই বড় ধাক্কা সকলের কাছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.