দিপালি সেন: নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটের ভুল সংশোধনে ফাইন এক হাজার টাকা। যা নিয়ে বিতর্ক চলছিলই। এতো টাকা ফাইন দেওয়া পড়ুয়াদের পক্ষে কতটা সম্ভব, তা নিয়েও উঠছিল প্রশ্ন। বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের (WBBSE) তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে পড়ুয়াদের তথ্যে ভুলের দায়িত্ব স্কুলকেই বহন করতে হবে। তা পড়ুয়া বা অভিভাবকদের উপর চাপানো যাবে না। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে ভুল থাকলে, তা সংশোধনে এক হাজার টাকা ফাইন দিতে হবে স্কুলকেই। একইসঙ্গে পড়ুয়াদের তথ্য পুনরায় যাচাই করা এবং ভুল থাকলে প্রয়োজনীয় সংশোধন করার সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটে পর্যন্ত সংশোধনের কাজ করতে পারবে স্কুলগুলি।
এক হাজার টাকা ফাইন। অনেকের মতেই তা ‘লঘু পাপে গুরু দণ্ড’। বেশ কয়েকটি শিক্ষক সংগঠনের তরফেও ফাইন হিসাবে ধার্য্য অর্থের পরিমাণ পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানানো হয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে। এ বিষয়ে পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, “রেজিস্ট্রেশনে কোনও ভুল হয়ে থাকলে তা সংশোধনের জন্য যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এরপরেও ভুলভ্রান্তি থাকায় কোথাও গিয়ে অবহেলাটাই পরিস্ফুট হয়।” এদিন বিজ্ঞপ্তি জারি করে রেজিস্ট্রেশনে ভুল তথ্যের নেপথ্যের পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরা হয় পর্ষদের তরফে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য পড়ুয়াদের তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া অনলাইন মাধ্যমে করা হচ্ছে। পর্ষদ জানিয়েছে, ২০২১ সালে স্কুলের তরফে রেজিস্ট্রেশনে সংশোধনের জন্য আবেদন জমা পড়েছিল ৯ হাজার ৮৪৩টি। ২০২২-এ সেই সংখ্যা নেমে এসেছিল ৪ হাজার ৪৬০-এ। যা ২০২১-এর তুলনায় ৫৪.৬৯ শতাংশ কম। এ বছর সেই সংখ্যা এক হাজারের নিচে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ সংশোধনের আবেদন জমা পড়েছে।
পর্ষদের তরফে আরও জানানো হয়েছে, এবছর অনলাইনে ১০ লক্ষ ৭১ হাজার ৪৬২ জন পড়ুয়ার তথ্যের মধ্যে অনলাইনে যাচাইয়ের সময় ৭০ হাজার ৫৩২টি ভুল তথ্য সংশোধন করে নেওয়া হয়েছে স্কুলের তরফে। কিন্তু, এরপরেও রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি নজরে এসেছে পর্ষদের। প্রথমত, ৩২টি স্কুলের তরফে ৭২ জন পড়ুয়ার দু’বার করে (ডুপ্লিকেট) এন্ট্রি করা হয়েছে। ৩৪টি স্কুলের তরফে ৪৬ জন পড়ুয়ার তথ্য সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে অনলাইনে তথ্য যাচাইয়ের সময়। তার থেকেও বড় কথা, ১৮২টি স্কুল অনলাইন তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া অংশগ্রহণের জন্য লগ-ইনই করেনি। এই তিন কারণে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্যই এক হাজার টাকা করে ফাইন গুনতে হবে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিকে।
প্রসঙ্গত, রেজিস্ট্রেশনের ফর্ম ফিলাপ হয় নবম শ্রেণিতে। তারপর স্কুলভিত্তিক পড়ুয়াদের চেক-লিস্ট পাঠানো হয় পর্ষদের তরফে। যা এবছর অনলাইনে করা হয়েছিল। সেই চেক-লিস্ট দেখে পড়ুয়াদের তথ্য সব ঠিক রয়েছে কি না মিলিয়ে দেখা হয় স্কুলে। শিক্ষকদের উপস্থিতিতে পড়ুয়াদের দিয়েই যাচাই করানো হয় তা এবং যাচাইয়ের পর প্রধান শিক্ষক সংশোধিত চেক-লিস্টটি পাঠিয়ে দেন পর্ষদের কাছে। চূড়ান্ত চেক-লিস্ট দেখেই ছাপানো হয় রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট। এরপরেও ভুলভ্রান্তি থাকলে, তা সংশোধনের জন্য ফাইন ১ হাজার টাকা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.