ধীমান রায়, কাটোয়া: প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গিয়েছে, বর্ধমানে লোকসভা ভোট হয়ে গিয়েছে৷ ভোটের জন্য আসা নিরাপত্তা রক্ষীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বিভিন্ন স্কুলে৷ টানা ৯-১০ দিন স্কুলে কাটানোর পর ভোটের কাজ শেষে বাহিনী কবেই চলে গিয়েছে। কিন্তু তখন থেকে আজও সাফাই হয়নি স্কুলের শৌচাগারগুলি।
আর সেসব অপরিষ্কার শৌচাগার ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে পড়ুয়ারা। আর তাতেই সংক্রমণ বাড়ছে৷ ঘটনা পূর্ব বর্ধমানের ভাতার গার্লস হাই স্কুলের৷ জানা গেছে, দু’সপ্তাহের মধ্যে ১৫ জন ছাত্রী ইতিমধ্যে সংক্রমণের শিকার হয়েছে। শিক্ষিকাদেরও কয়েকজনও সংক্রমণের জেরে অসুস্থ৷ অভিভাবকরা এনিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অনেকেই মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাঠাচ্ছেন।
পূর্ব বর্ধমান জেলার ২৯ এপ্রিল চতুর্থ দফায় নির্বাচন হয়েছিল। অন্যান্য এলাকার মতই ভাতার এলাকাতেও সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন রেখে সিংহভাগ বুথেই নির্বাচন হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতার গার্লস হাইস্কুলে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্রবাহিনীর প্রায় ৮০ জনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভোটের এক সপ্তাহ আগেই তাঁরা এলাকায় চলে আসেন। ভাতার গার্লস হাইস্কুলে তাঁদের ক্যাম্প করা হয়েছিল। ভোট শেষ করে পরেরদিন তাঁরা চলে যান। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সময় নিরাপত্তাবাহিনী স্কুলে গিয়েছিলেন, তখন স্কুলের সাবমার্সিবল পাম্প খারাপ ছিল। তাই জলের জন্য তারা নিজেরাই পাম্প বসিয়েছিল। স্কুল ছাড়ার সময় পাম্প তুলে নিয়ে চলে যায়। তারপর থেকে এমনিতেই স্কুলে জলকষ্ট ছিল। সেইসঙ্গে দেখা যায়, পুলিশবাহিনী স্কুলের শৌচাগার ব্যবহার করার পর প্রচণ্ড অপরিষ্কার অবস্থায় ফেলেই চলে যায়। সেই অবস্থাতেই আজও পড়ে রয়েছে।
দেখা যায়, তিনমাস আগেকার শুকনো বিষ্ঠা শৌচাগারগুলির ভিতরে ছড়িয়ে রয়েছে। তার মাঝে গাছের শুকনো পাতা, ধুলোবালি জমেছে। প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্কুলের শিক্ষিকা সুমনা রায় প্রতিহার, মহুয়া সেন রায়রা জানিয়েছেন, ‘শৌচাগারগুলি অপরিষ্কার থাকায় ছাত্রীদের অনেকেই সংক্রমণের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। শিক্ষিকাদেরও কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তিনমাস ধরে শৌচাগার পরিষ্কার করা হয়নি। কোনও কোনও ছাত্রী মাঠেঘাটে ছুটছে। বাকিরা বাধ্য হয়ে নোংরা বাথরুম ব্যবহার করছে। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’
দেশজুড়েই স্বচ্ছ ভারত অভিযানের প্রচার করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাঠ দেওয়া হচ্ছে সব স্কুলেই৷ তাহলে ভাতার গার্লস হাইস্কুলের শৌচাগারগুলির এই অবস্থা কেন? স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শোভনা দাসের কথায়,‘আমাদের স্কুলে সাফাইয়ের কাজ যিনি করতেন, তিনি অন্য একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজে চলে গিয়েছেন। স্থানীয় সুইপার বলে কিছু নেই। পরিচালন সমিতিকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে যাতে লোক জোগাড় করে পরিষ্কার করানো হয়। কিন্তু কাজের লোক মেলেনি।’ ভাতার গার্লস হাইস্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি বলাই দাস বৈরাগ্যের মতামত জানতে এদিন বারবার তাঁর মোবাইলে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি৷ ফলে এই সমস্যা নিয়ে তাঁর মতামত জানা যায়নি৷
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.