দীপঙ্কর মণ্ডল: এ রাজ্যে একটানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল বামেরা। তবে সরকারি ভবনে লাল রঙ করার রেওয়াজ অবশ্য বহু পুরনো। পরাধীন ভারতেও সরকারি ভবনের রং ছিল লাল। কিন্তু, তৃণমূল জমানায় উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, এমনকী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনগুলির রং পালটে ফেলার নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, ৩১ মার্চের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নীল-সাদা করতে হবে। কিন্তু, সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও, জেলার বহু স্কুলেই সরকারি নির্দেশ কার্যকর হয়নি। বরং, নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জমা পড়েছে শিক্ষা দপ্তরে। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটলে স্কুল ভবনের রং পালটানো নিয়ে রাজ্য সরকার নয়া নির্দেশিকা জারি করতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
[পঞ্চায়েতে প্রার্থীদের জেতাতে বিধায়কদের ‘ছুটি’ দিল তৃণমূল]
মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ। এখন চলছে উচ্চ মাধ্যমিক ও একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষা চলবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। পরপর দুটি বড় পরীক্ষার চাপ সামলে ভবনের রং পালটে উঠতে পারেনি অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষই। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, পঞ্চাশ বা তারও বেশি পুরনো স্কুলগুলি একটি নির্দিষ্ট রঙেই পরিচিত। তাই রাতারাতি রং পরিবর্তনে আপত্তি তুলেছেন স্কুলের প্রাক্তনীরা। সরকারি নির্দেশের সায় নেই স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। যেমন কৃষ্ণচন্দ্র হাইস্কুল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই স্কুলটি প্রায় সত্তর বছরের পুরনো। প্রথম থেকেই স্কুল ভবনের রং গেরুয়া। শিক্ষা দপ্তরকে চিঠি দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুরনো গেরুয়া রঙই বহাল রাখতে চায় তারা। কৃষ্ণচন্দ্র হাইস্কুলটি আগে রামকৃষ্ণ মিশনের অধীনে ছিল। সাতাত্তরে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর, স্কুলটি অধিগ্রহণ করে রাজ্য সরকার। প্রধান শিক্ষক চন্দনকুমার মাইতি জানিয়েছেন, ‘সরকারি নির্দেশ মানা সম্ভব নয়। নীল-সাদা রং করব না বলে আমরা স্কুলশিক্ষা দপ্তর ও জেলাশাসককে জানিয়ে দিয়েছি। নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছি।‘ এমনকী, সরকার যদি নির্দেশ মানতে বাধ্য করে, তাহলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কৃষ্ণচন্দ্র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। দক্ষিণ ২৪ পরগনা তো বটেই, মথুরাপুরের এই স্কুলটি রাজ্যের অন্যতম সেরা গ্রামীণ স্কুল। উৎকর্ষতার বিচারে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের পুরস্কার পেয়েছে কৃষ্ণচন্দ্র হাইস্কুল।
[মনোনয়নের দ্বিতীয় দিনে অগ্নিগর্ভ বীরভূম, বিডিও অফিসের সামনে বোমাবাজি ]
বস্তুত, শুধু রং বদলানোই নয়, নীল-সাদা রঙ করার জন্য আর্থিক বরাদ্দ নিয়ে খুশি নয় বেশিরভাগ স্কুল কর্তৃপক্ষই। গত জানুয়ারিতে স্কুলের রং বদলের নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য সরকার। স্কুল ভবনের রং নীল-সাদা করার জন্য স্কুলগুলিকে প্রতি বর্গমিটারে ৩০.৫৭ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। বাজেট বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, পাঁচ বছর আগে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত সমস্ত সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলি এই অনুদান পাবে। প্রধানশিক্ষকদের বক্তব্য, ‘দেওয়ালে স্থায়ী রং করতে প্রতি বর্গমিটারে খরচ প্রায় ২০০ টাকা। সরকার দেবে ৩০.৫৭ টাকা। বাকি টাকা কীভাবে আসবে তার কোনও হদিশ নেই। এই সামান্য টাকায় যদি রং করতে হয়, তাহলে চুন দিয়ে সাদা ও সস্তায় নীল রং করতে হবে। একবার বৃষ্টি হলেই তা ধুয়ে যাবে।‘
[ইরাকে নিহত তেহট্ট ও চাপড়ার দুই যুবকের দেহ ফিরল, ক্ষতিপূরণ চেয়ে ক্ষোভ স্থানীয়দের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.