Advertisement
Advertisement

শূন্য বেঞ্চ থেকে হ্যাশট্যাগ, সর্বত্রই স্বর্ণেন্দু-স্মৃতি

পড়াশুনোয় যেমন মেধাবী ছিল তার ছাপ সে জীবনের শেষ পরীক্ষাতেও স্পষ্ট রেখে গিয়েছে৷

School mates are mourning for him
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:November 5, 2016 9:00 am
  • Updated:November 5, 2016 9:05 am  

অনির্বাণ বিশ্বাস ও তপন বন্দ্যোপাধ্যায়: কাঠের বেঞ্চে সাদা কাগজের উপর নীল কালিতে লেখা নামটা শুক্রবার বেলাতেও জ্বলজ্বল করছিল৷

সকালে ক্লাসরুম খুলতে এসে ওই শূন্য বেঞ্চের উপর সাঁটা নামের চিরকুটর দিকে নজর গিয়েছিল স্কুলের কেয়ারটেকারের৷ কোনওরকম নিজেকে সামলে চলে যান তিনি৷ কিন্তু পরীক্ষায় বসার ঘণ্টা বাজতেই একে একে এসে হাজির বন্ধুরা৷ সবার সঙ্গে যে খুব ভাল বন্ধুত্ব ছিল আপাত শান্ত স্বভাবের স্বর্ণেন্দুর তা নয়৷ কিন্তু ওই বেঞ্চের সামনেই থমকাল প্রত্যেকে৷ কেউ কোমল হাত ছোঁয়াল স্বর্ণেন্দু রায় লেখা একটু ওই কাগজের ফালির উপর৷ আবার কেউ দ্রুত নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করল৷ কান্না চেপে রাখতে না পেরে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু আঁকড়ে ধরলেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যদের৷ আজ একই সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় বসার কথা ছিল বন্ধু স্বর্ণেন্দুর৷

Advertisement

পূর্বনির্ধারিত টেস্ট পরীক্ষা হয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পরও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ঠিকভাবে লিখে উঠতে পারেনি৷ বসিরহাট টাউন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক যোগেশ ঘোষ জানালেন, “বাইরের প্রশ্নপত্রের উপর এই টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হয়৷ হাতে বিকল্প কোনও প্রশ্নপত্র না থাকায় স্কুল ছুটি দেওয়া যায়নি৷ তবে পরীক্ষা শেষে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে ছাত্রছাত্রী সবাই একই সঙ্গে স্বর্ণেন্দুর সঙ্গে জন্য শোকজ্ঞাপন করেছেন৷ সন্ধ্যায় স্বর্ণেন্দুর মরদেহও নিয়ে আসা হয় স্কুলে৷”

14372092_1778825939069353_6316664185598258833_o

তবে স্কুলের শিক্ষক থেকে ছাত্রছাত্রী কেউ মানতে রাজি নন স্বর্ণেন্দুর অনুপস্থিতি৷ তাঁদের একটাই কথা স্বর্ণেন্দুর মৃত্যু হয়নি৷ হতেও পারে না৷ পড়াশুনোয় যেমন মেধাবী ছিল তার ছাপ সে জীবনের শেষ পরীক্ষাতেও স্পষ্ট রেখে গিয়েছে৷ স্কুলের শিক্ষকদের মুখে মুখে ঘুরছে স্বর্ণেন্দুই নতুন প্রজন্মের রোল মডেল হওয়া উচিত৷ নিজের জীবন শেষেও তিনটি প্রাণ ও দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে সক্ষম৷ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও গর্ব করছেন স্বর্ণেন্দুর আমাদের স্কুলের ছাত্র বলে৷ বন্ধুদের হাজারো দুঃখের মধ্যেও মনে এক চিলতে খুশি স্বর্ণেন্দু ফের তাকিয়ে দেখবে অন্য কারও মধ্যে৷ তবে স্কুলের সবার আড়ালেই এদিন চোখের জল ফেলেন প্রধান শিক্ষক৷ হতে পারেন তিনি সব ছাত্রের কাছেই সমান৷ কিন্তু স্বর্ণেন্দুর সঙ্গে যে যোগেশবাবুর সম্পর্কটা নিতান্তই ছাত্র-শিক্ষকের নয়৷ স্কুলের শিক্ষকরাই জানিয়েছেন, নিজের নাতিকে হারিয়ে এদিন বারে বারে ভেঙে পড়েছেন যোগেশবাবু৷ স্বর্ণেন্দু সম্পর্কে যোগেশবাবুর ভাগনির সন্তান৷ তাই দাদু-নাতির সম্পর্কটা নাড়া দিয়েছে তাঁকে৷

এদিন স্বর্ণেন্দুর পাড়া বসিরহাটের যুবক সংঘে গিয়েও দেখা যায় শোকস্তব্ধ পরিবেশ৷ গোটা পাড়াই কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে৷ ক্লাবের পতাকা অর্ধনমিত রাখার পাশাপাশি স্বর্ণেন্দুর প্রিয় গিটারে রাখা রয়েছে তারই মাথার টুপি৷ শুক্রবারও দিনভর স্বর্ণেন্দুর ফেসবুক ভেসে উঠেছে বন্ধুদের পাঠানো অসংখ্য শোকবার্তা, একসঙ্গে কাটানো মুহূর্ত বা কথোপকথন৷ স্বর্ণেন্দুর পরিবারের মহান এই অঙ্গদান গর্ব করেছেন বন্ধুরা৷ অনেকেরই আক্ষেপ, প্রিয় বন্ধুর নামের ‘হ্যাশট্যাগ’ এভাবে না হলেই ভাল হত৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement