Advertisement
Advertisement
Sayani Ghosh

ভাল কাজের পুরস্কার, তৃণমূলের যুব সভাপতির পদে ‘বাজিগর’ সায়নী ঘোষ

"দায়িত্ব পেয়ে গিয়েছি, এবার মাঠে নেমে পড়ব।" বলে দিলেন সায়নী।

Sayani Ghosh to head TMC's youth wing | Sangbad Pratidin
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:June 5, 2021 5:18 pm
  • Updated:June 22, 2022 12:07 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভোটে জেতেননি। জিতে নিয়েছিলেন মানুষের মন। এবার তারই পুরস্কার হিসেবে বড় দায়িত্ব এল হাতে। তৃণমূল যুব সভাপতির পদে নির্বাচিত হলেন ‘বাজিগর’ সায়নী ঘোষ (Sayani Ghosh)। আজই দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী এই পদ থেকে ইস্তফা দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে দলের সম্প্রসারণের দায়িত্ব এসে বর্তায় তাঁর কাঁধে, তাঁকে দেওয়া হয়েছে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ। আর তাঁর ছেড়ে যাওয়া জায়গাতেই অভিষেক হল সায়নীর।

অভিনেত্রী থেকে তৃণমূলের যুব সভাপতি। নিঃসন্দেহে এ এক দারুণ উত্তরণ। এই ক-দিন আগে পর্যন্তও তাঁর পরিচয় ছিল তিনি স্মার্ট, বুদ্ধিদীপ্ত একজন অভিনেত্রী। একই সঙ্গে প্রতিবাদীও। যে কোনও অন্যায় নিয়ে তিনি বরাবরই সরব। তাঁর এই প্রতিবাদী চরিত্রে যেন ছিল রাজ্যের যুবমানসেরই প্রতিফলন। ভোটের আগে বাঙালি সত্তা যখন বারবার ‘বহিরাগত’দের হাতে আঘাতের মুখে পড়েছে, দ্বিধাহীন ভাবে তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন সায়নী। তাঁর মত, তাঁর বক্তব্য নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট দলের বিরুদ্ধে তাঁর বক্তব্য ও মতামত অধিকাংশ সময়েই রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের সমর্থন পেয়েছে। টেলিভিশনের বিতর্কসভা থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, বাঙালির জন্য এবং বাংলার জন্য তাঁর আবেগ ও লড়াই ছিল চোখে পড়ার মতো। তরুণ এই মুখকে চিনতে ভুল করেননি দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কিছুদিনের মধ্যেই তৃণমূল দলে যোগ দেন তিনি, এবং আসানসোল দক্ষিণের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁকে টিকিট দেয় দল।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘কেউ ভুল করলে ক্ষমা করা উচিত’, দলত্যাগীদের ফেরানো নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ফিরহাদের]

দায়িত্ব পেয়ে একেবারে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েন সায়নী। অনেক সময়ই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কলকাতার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরের মানুষ- এমন একটা ধারণা থেকে যায়। গ্ল্যামারের দুনিয়া থেকে তাঁরা কতটা মাটির পৃথিবীতে নেমে আসতে পারবেন তা নিয়ে সন্দিহান থাকেন সাধারণ মানুষ। সেই ইমেজ ঝেড়ে ফেলে গোড়া থেকেই আসানসোলের ঘরের মানুষ হয়ে উঠতে চেষ্টার কোনও কসুর করেননি সায়নী। নির্বাচনে জেতা এবং ফ্যাসিস্ট শক্তিকে রুখতে তাঁর উদ্যোগ ও উদ্যম সকলেরই নজর কাড়ছিল। তিনি দলে নতুন। দলীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতা তেমন বেশি নয়। কিন্তু রাজনীতিতে তিনি যে লম্বা রেসের ঘোড়া তা প্রতি পদক্ষেপেই প্রমাণ করছিলেন সায়নী। মাঝেমধ্যে ওঠা খুচরো বিতর্কের ধুলো ঝেড়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েই ভালবাসার পুষ্পবৃষ্টি গায়ে মেখেছিলেন সায়নী। দলের তরুণদের মধ্যে মাটির রাজনীতি আর সোশ্যাল মিডিয়ার উপস্থিতির আশ্চর্য ভারসাম্য দেখিয়েছিলেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই তাঁর কুশলতায় অবাক হয়েছিলেন।

ভোটবাক্সে অবশ্য ফল খানিক অপ্রত্যাশিতই হয়েছিল। অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিমান হওয়া সত্ত্বেও শেষমেশ বিজেপির অগ্নিমিত্রা পালের কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হয় তাঁকে। কিন্তু ভোটের পরাজয়ই যে গন্তব্যের শেষ মাইলফলক নয়, সম্ভবত এ শিক্ষা দলনেত্রী মমতার থেকেই শিখেছেন সায়নী। হেরে যাওয়া মানেই ভেঙে পড়া নয়। সায়নীও ভেঙে পড়েননি। ভোটের পর শুরু করেছিলেন নতুন ইনিংস। যে মাটি থেকে তাঁর উত্থান রাজনীতিতে, সেই মাটিতেই ফিরে গিয়েছিলেন সায়নী। আসানসোলের মানুষ আবার তাঁকে বরণ করে নিয়েছিলেন। দাবি উঠেছিল, কোনওভাবে সায়নীকে আসানসোলের কোনও দায়িত্বে আনার। জনতার দাবিকে অগ্রাহ্য করেনি দল। তবে শুধু আসানসোলের মানুষ নয়, সাধারণ ভাবে রাজ্যের মানুষের জন্যই দল ফিরিয়ে আনল তাঁকে। দলের যুব সভাপতি নির্বাচিত হলেন তিনি।

রাজ্যের ভোটে ব্যাপক জয় হাসিল করেছে তৃণমূল। বিজেপির মতো দলের বিরুদ্ধে মমতা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং বাংলার মানুষ সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর এই প্রতিরোধকে সমর্থন করেছে। এই জয়ের পর এখন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয় ক্ষেত্র। আগামী লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই দলের খোলনলচে বদলানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখযোগ্য ভাবে এই পর্বেও তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রশান্ত কিশোর, যাঁর ক্ষুরধার মস্তিষ্ক ছিল তৃণমূলের জয়ের নেপথ্যে। আগামীর লড়াইয়ের দিকে তাকিয়েই সেনাপতি সাজানোর কাজ এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছেন মমতা। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য আজ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি গ্রহণ করা হয়। যেখানে দলের সার্বিক ক্ষমতা অনেকের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এক ঝাঁক তরুণ মুখকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তুলে আনা হয়। রদবদল হয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদেও। সেইমতো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর, দলের যুব সভাপতি পদ শূন্য হয়ে পড়ে। আর সেই পদেই অভিষেক হয় সায়নীর। সূত্রের খবর, তাঁর এই নির্বাচনে সায় দিয়েছেন দলের অন্যান্য নেতারা। তরুণ মুখ হিসেবে দলের প্রতি যে কর্তব্যনিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি ভোটপর্বে, এ যেন তারই পুরস্কার। সায়নীও বলে দেন, “দায়িত্ব পেয়ে গিয়েছি, এবার মাঠে নেমে পড়ব।”

[আরও পড়ুন: যুব তৃণমূল সভাপতি হলেন সায়নী ঘোষ, কে কোন পদ পেলেন, দেখে নিন]

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র যুব সভাপতির নির্বাচন মাত্র নয়, তা বহুমাত্রিকও বটে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিরোধীরা প্রায়শই যে স্বজনপোষণের বিতর্ককে উসকে দিতে চান, কার্যত এই সিদ্ধান্ত দিয়েই তাকে বহু দূরে ছুড়ে ফেলে দিলেন মমতা। এ ছাড়া অভিষেকের ছেড়ে যাওয়া পদে সায়নীর নির্বাচন দলের ভিতর কোনওরকম অসন্তোষের পরিস্থিতির জন্ম সম্ভাবনাও অঙ্কুরে বিনষ্ট করল। সেইসঙ্গে উল্লেখ করার মতো, এই সিদ্ধান্তের জোরে দলে মহিলাদের ক্ষমতায়নের উপর বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করা হল। এই বিষয়ে বরাবরই খেয়াল রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রার্থী তালিকা থেকে শুরু করে দলের মন্ত্রিসভায় তিনি মহিলাদের জায়গা সুনিশ্চিত করে থাকেন। একইভাবে এবার দলের যুব সভাপতির পদটি সায়নীর হাতে তুলে দিয়ে তিনি যেন আরও একবার ‘বাংলার মেয়ে’র গুরুত্ব বোঝালেন। শুধু সায়নীর রাজনৈতিক কেরিয়ারেই নয়, বাংলার রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে এ এক তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement