দেব গোস্বামী, বোলপুর: ”আপনাদের শহর বিশ্বের কাছে সমাদৃত। আমি আর ক’দিন? বিশ্বভারতীকে আপনারা বাঁচান।” এমনই বিতর্কিত মন্তব্য করলেন বিশ্বভারতীর (Vishwa Bharati)উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। রবিবার আশ্রম চত্বরের রাস্তায় টোটো ভারী যান চলাচলের নিয়ন্ত্রণ করতে এবার পথে নামলেন খোদ উপাচার্য। টোটো চালকদের অবৈধ পার্কিং সরিয়ে নিয়ে যেতে হাতজোড় করে আবেদন জানান বিদ্যুৎ চক্রবর্তী-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। উপাচার্যের (VC) আবেদন শুনে হতবাক টোটো চালক থেকে শুরু করে প্রাক্তনী ও বোলপুর-শান্তিনিকেতনের বাসিন্দারা। আশ্রমিকদের একাংশ কটাক্ষ করে বলছেন, উপাচার্যের মেয়াদের শেষ মুহূর্তে যাওয়ার সময় মতি ফিরেছে তাঁর।
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর পর রাজ্য সরকারের ফেরত নিয়ে নেওয়া রাস্তা ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর (Draupadi Murmu) দ্বারস্থ উপাচার্য। চিঠির প্রতিলিপিও দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর বা প্রধান তথা রাজ্যের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। গত পাঁচ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের আন্দোলন থেকে শুরু করে নানা সমস্যা দেখা দিলেও উপাচার্যকে এভাবে পথে নামতে কখনই দেখা যায়নি। কিন্তু এদিন অন্য ভূমিকায় দেখা গেল উপাচার্য-সহ অন্যান্য আধিকারিকদের।
শান্তিনিকেতনকে ইউনেসকোর (UNESCO) বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতি ঘোষণার পরই রাস্তা ফিরে পেতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। শান্তিনিকেতন থেকে শ্রীনিকেতনের সংযোগকারী প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার আশ্রমের মাঝ বরাবর রাস্তাটি রক্ষণাবেক্ষণ করে রাজ্য সরকারের পূর্ত বিভাগ। রাস্তাটি বর্তমানে পূর্ত দপ্তরের অধীনে এবং জেলাশাসকের নিয়ন্ত্রণে। ২৫ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারের রাস্তা ফের বিশ্বভারতীকে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে পরপর দুটি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেন উপাচার্য।
এরপরই শনিবার বিপুল সংখ্যক টোটো ও ভারী যান চলাচলের নিয়ন্ত্রণ করতেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে কর্তৃপক্ষ। রবিবার, টোটো (Toto)চালকদের অবৈধ পার্কিং সরিয়ে নিয়ে যেতে হাত জোড় করে আবেদন জানান বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সহ অন্যান্য আধিকারিকেরা। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, “বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনদিনই পায়ে হেঁটে চলা এবং টোটো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনেসকো শান্তিনিকেতনকে ‘বিশ্ব হেরিটেজ’ তকমা দিয়েছে। এই তকমা ধরে রাখতে হবে আমাদের সকলকেই। এই রাস্তার দুই ধারে একাধিক ঐতিহ্যবাহী ভবন, স্থাপত্য, ভাস্কর্য রয়েছে। ভারী যান চলাচলের ফলে কম্পনে এগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাস্তাটির দু’ধারে অবৈধ পার্কিং ও ফেরিওয়ালাদের উৎপাত বন্ধ করতেই বিশ্বভারতীকে রাস্তা ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছি। আমরা কারও ক্ষতি বা অসুবিধা করতে চাই না।”
অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি সাড়া না পেয়ে আশ্রম চত্বরের অভ্যন্তরের রাস্তা ফেরত পেতে উপাচার্য দ্বারস্থ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতির কাছেও। বোলপুর-শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা থেকে শুরু করে প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকদের একাংশ বলছেন, যানজট নিয়ন্ত্রণ সব কিছুর মূলে রয়েছে প্রাপ্ত স্বীকৃতির রক্ষার তাগিদ। শান্তিনিকেতনের (Santiniketan) এই গরিমা সকলকেই ধরে রাখতে হবে। আশ্রম চত্বরে যত্রতত্র টোটো পার্কিং ভালোও দেখায় না। ঐতিহ্যবাহী স্থানে টোটো ও ভারী যান চলাচল প্রবেশ করতে না দেওয়াই উচিত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.