পুরুলিয়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোকে নিয়ে মিছিল হুড়ায়। নিজস্ব চিত্র
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর প্রচারের জন্য দুধ সাদা নতুন স্করপিও আসছে। তবে তা ভাড়া করা। সেই ভাড়া করা নতুন স্করপিওতেই প্রচার কাজ সারবেন পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক, প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো।
সেই ১৯৭৮ সাল থেকে রাজনীতিতে। কিন্তু তাঁর নিজস্ব কোনও চার চাকার গাড়ি নেই। ভাড়া গাড়িতেই চড়েন তিনি। শহর পুরুলিয়ায় থাকেনও ভাড়া বাড়িতে। ২০১১ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত দু-দুবার মন্ত্রী থাকায় রাজ্য সরকারের গাড়িতেই চড়কিপাক খেতেন। তা রাজনীতির কাজ হোক বা দপ্তরের। গত তিন সপ্তাহে তিনি ২ টি ভাড়া গাড়ি বদলেছেন। গত বিধানসভায় বলরামপুর কেন্দ্রে মাত্র ৫০০ ভোটেরও কমে হেরে যাওয়ার পর পুরনো ভাড়া করা স্করপিওতে চড়তেন। কিন্তু সেই গাড়ি খানিকটা বিগড়ে যাওয়ায় ডিজাইরে যাতায়াত করছিলেন। কিন্তু ছোট গাড়িতে তাঁর ভীষণই অসুবিধা হওয়ায় বর্তমানে সপ্তাহ দুয়েক ধরে একটি সাদা রঙের আরটিকাতে চড়ছেন। কিন্তু ওই গাড়িতে তো আর প্রচার কাজ করতে পারবেন না। তাই ভাড়া করা নতুন দুধ সাদা স্করপিও আসছে।
শান্তিরাম মাহাতোর গাড়ির চালক জাহাঙ্গির খান বলেন,” স্যারের সাদা রঙ পছন্দ। তাই নতুন স্করপিও আসতে একটু দেরি হচ্ছে। কালো রঙের স্করপিও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু স্যার সাদা গাড়ি ছাড়া চড়বেন না। আমরা আশা করছি বুধবারের মধ্যে নতুন দুধ সাদা স্করপিও পেয়ে যাব। তবে ওই গাড়ি ভাড়া করা।” প্রার্থীর কথামতো গাড়ির মালিক দুধ সাদা স্করপিও কিনে ভাড়ায় প্রাক্তন মন্ত্রীকে দেবেন। শান্তিরামের কথায়, ” আমার তো গাড়ি নেই। আমি ভাড়া গাড়িতেই চড়ি। প্রচারের কাজের সুবিধায় নতুন গাড়ি চাওয়া হয়েছে।”
রবিবার ব্রিগেডের সমাবেশ সেরে সোমবার বিকালে পুরুলিয়ায় পা রাখতেই তাঁর প্রচার শুরু হয়ে যায়। এদিন বিকাল সাড়ে চারটে নাগাদ হুড়ার লালপুর মোড়ে পা রাখেন। প্রার্থীর পরনে ছিল কচি কলাপাতা রঙের পাঞ্জাবি। সাদা পাজামা। সঙ্গে হাফ সু। ফুল- মালার অভ্যর্থনায় ভেসে যাওয়ার পর লালপুর মোড়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে মিছিল করেন তিনি। হুড়া ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। হুড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রসেনজিৎ মাহাতো প্রার্থীকে লাড্ডু দিয়ে মিষ্টিমুখ করান। সেই লাড্ডু বিতরণ হয় সকলের মধ্যে। চলে করমর্দন, কোলাকুলি, সেলফি। পুরুলিয়া শহরে আসার পথে হুটমুড়াতেও আটকে যায় প্রার্থীর গাড়ি। হুটমুড়া অঞ্চল তৃণমূল কার্যালয়ের পাশে ছোট সভা করতে হয় তাঁকে।
ওই সভা থেকেই প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “একজন সাংসদ চাইলে কেন্দ্রের অর্থে নিজের এলাকায় অনেকটাই উন্নয়ন করতে পারেন। কিন্তু এখানকার সাংসদ তা করেননি। এখন ভোট আসছে বলে মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সাধারণ মানুষ সব বোঝেন। ভোটে জবাব দেবেন। জেলার মানুষ যে স্বপ্নে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন তার একটাও পূরণ হয়নি। ” প্রার্থী হুটমুড়ার কর্মসূচি সেরে শহরে তাঁর রাঁচি রোডের কার্যালয়ে আসতে গেলেও গাড়ি থেমে যায় পুরুলিয়া শহরের তেলকল পাড়ায়। সেখানে শহর তৃণমূলের নেতারা ফুল- মালায় অভ্যর্থনা জানান।
গতকাল তখন বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যে। পুরুলিয়া সার্কিট হাউসের উলটোদিকে শান্তিরাম মাহাতোর রাঁচি রোডের কার্যালয়ের মুখে ব্যান্ডপার্টির আওয়াজে কান ঝালাপালা। প্রার্থীকে বরণ করে নিতে তৈরি দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। গাড়ি থেকে নামতেই স্লোগান উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন কর্মীরা। ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো । একের পর এক শহর নেতৃত্ব, পুরুলিয়া পুরসভার কাউন্সিলররা সহ বিভিন্ন ব্লকের নেতা-কর্মীরা থেকে সাধারণ মানুষজনও প্রার্থীকে নিয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সন্ধ্যে শেষ হয়ে রাতেও বিরাম নেই। প্রার্থীকে নিয়ে উচ্ছ্বাস চলতেই থাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.