দীপঙ্কর মণ্ডল: স্যানিটাইজারের (Sanitiser) আকাল কিছুটা মিটলেও সমস্যায় নির্মাতারা। হ্যান্ড স্যানিটাইজারে অন্তত ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল রাখতে হয়। যা হতে হয় বিশুদ্ধ। কিন্তু চাহিদা বাড়ায় আইসোপ্রোফাইল অ্যালকোহলের দাম বেড়েছে। ফলে নির্মাণ কাজে নেমে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নির্মাতাদের।
করোনা দমনে মানুষের কাছে অস্ত্র হল স্যানিটাইজার। ব্যক্তিগত স্বচ্ছতাকে গুরুত্ব দিলেই মারণ ভাইরাসের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে সেই স্যানিটাইজার নির্মাণ করতে গিয়ে সমস্যার মুখে নির্মান সংস্থাগুলি। স্যানিটাইজারে ব্যবহৃত অ্যালকোহলের আগে দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা প্রতি লিটার। এখন যা বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকার বেশি। স্যানিটাইজার তৈরিতে গ্লিসারিন, ভেষজ তেল-সহ লাগে আরও কিছু উপাদান। ১০০ এমএল (ML) ৫০ টাকা এবং ২০০ এমএল বিক্রিতে ১০০ টাকা সরকার দাম বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। উৎপাদন খরচের তুলনায় যা কম বলে জানিয়েছে বহু সংস্থা। তাদের আশঙ্কা, অনুমোদনহীন কিছু সংস্থা সস্তায় স্যানিটাইজার তৈরি শুরু করেছে। তাতে অ্যালকোহলের বিশুদ্ধতা থাকছে না। তার ফলে ভাইরাস নিধন তো হবেই না, উল্টে ক্ষতি হবে চামড়ার।
করোনা মোকাবিলায় রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার একযোগে বারবার হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারের কথা বলেছে। এই দুই প্রক্রিয়া ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নিধনের মোক্ষম অস্ত্র। লকডাউনের শুরুতেই বিভিন্ন নামী সংস্থা হ্যান্ড ওয়াশ এবং স্যানিটাইজার তৈরি শুরু করে। অত্যন্ত পরিচিত সংস্থা ‘অরিশ’ হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছে। সংস্থার তরফে রতেন্দুবিকাশ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, “হ্যান্ড স্যানিটাইজার অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হলেও সরকার ১৮ শতাংশ জিএসটি (GST) নিচ্ছে। পাশাপাশি কাঁচামালের দাম বেশি হওয়ায় আমরা লোকসানের মুখে।” বোরোলিন এবং সুথলের নির্মাতা সংস্থা ‘বোরোলিন রক্ষা’ নামে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাজারে এনেছে। এছাড়াও লাইফবয় (Life Boy), ডেটল (Dettol) প্রভৃতি সংস্থাও একই পণ্য তৈরি করছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হওয়ায় লকডাউনে উৎপাদন জারি। অনলাইনেও বিকোচ্ছে হুহু করে। সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ কেয়া শেঠের সংস্থাও ‘অঙ্কুশ’ নামে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছে। কেয়া জানিয়েছেন, “হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান অ্যালকোহল পাওয়া যাচ্ছে না। নকল পণ্যে বাজার ছেয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ভুগতে পারেন প্রচুর মানুষ।” এই সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, প্রকৃত উপাদানের অভাবে অ্যালকোহলের গন্ধবিশিষ্ট তরল ব্যবহৃত হতে পারে। যার ফলে হাতের চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সরকারি কর্তারা যদিও অ্যালকোহলের দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করেননি। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা দাবি করেছেন, জীবাণুনাশক তরল তৈরির জন্য আইসোপ্রোফাইল অ্যালকোহলের জোগান একই আছে। লিভোসিনের নির্মাতা সংস্থা অ্যালেন হ্যান্ড রাব এবং স্যানিটাইজার তৈরি করছে। সংস্থার তরফে জি পি সরকার জানিয়েছেন, তাঁদের স্যানিটাইজারে নিম এবং অ্যালোভেরা রাখা হয়। অরিশ গোষ্ঠীর তরফে রতেন্দুবিকাশ জানিয়েছেন, তাঁদের পণ্যে অতিরিক্ত থাকে গ্লিসারিন। আয়ুশ মন্ত্রকের নির্দেশ মেনেই সবাই কাজ করছেন। স্থানীয় কিছু সংস্থা জানিয়েছে, অনলাইনে আইসোপ্রফাইল অ্যালকোহল মিলছে। তা দিয়ে তৈরি হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী– অনেকেই ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া স্যানিটাইজার তৈরি করছে। পরিচিত ব্র্যান্ড ছাড়া এই জিনিস হাতে ঢাললে সমস্যা হতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.