Advertisement
Advertisement
কাঁসাইয়ের বুক থেকে বালি পাচার

নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে বর্ষায়ও বেআইনি বালি উত্তোলন কাঁসাই নদীর বুকে, নীরব দর্শক পুলিশ

বিপদ বাড়ছে পুরুলিয়ায় কাঁসাই নদীর উপরে দুটি সেতুর।

Sand mining in Kangsabati River at Purulia, cops mute spectators
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:July 10, 2020 7:06 pm
  • Updated:July 10, 2020 7:14 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: চারপাশ শুনশান, নদীর চর জুড়ে নিকষ কালো অন্ধকার। সেই আঁধার ঠেলে চারদিক থেকে ঘটঘট শব্দ একেবারে কানে ধাক্কা দেয় যেন। যেন গঙ্গাবক্ষে ভুটভুটি চলছে। কিন্তু আসলে যা ঘটছে, তা বড়সড় এক অপরাধ। নদীর দু’ধারের কাঁচা রাস্তা দিয়ে ট্রাক্টরের পর ট্রাক্টরে বালি পাচার চলছে। অথচ এই ভরা বর্ষায় বালি উত্তোলনের কাজ বন্ধ থাকার কথা। ১ জুলাই থেকেই বালি উত্তোলনের কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ জারি করেছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক স্বয়ং।

PRL-sand1

Advertisement

তবুও সেই নির্দেশ উড়িয়ে বালি পাচার চলছেই পুরুলিয়া শহর ঘেঁষা টামনা থানা এলাকার কাঁসাই নদীবক্ষে। কোনওরকম বৈধ ঘাট ছাড়াই জাতীয় সড়ক ও রেল সেতুর ৭১৮ মিটারের মধ্যে একাজ হওয়ায় দুই সেতুকে ঘিরে ক্রমশই বাড়ছে বিপদ।

[আরও পড়ুন: পরকীয়ার টানে নিখোঁজ, ৪ মাস পর উদ্ধার দেওর-বউদির ঝুলন্ত দেহ]

বৃহস্পতিবার রাতে ঘড়ির কাঁটা তখনও দশটা ছোঁয়নি। কাঁসাইয়ের সেতুর উপরে দাঁড়িয়েই দেখা গেল প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ ফুট নিচে নদীর বুক থেকে অবিরাম চলছে বালি তোলার কাজ। আর সেই বালি উঠছে ট্রাক্টরে। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে মধ্যরাত। এমনকী ভোর হয়ে সকালেও শ’য়ে শ’য়ে ট্রাক্টর বালি নিয়ে একেবারে টামনা থানার দেওয়াল ঘেঁষে চলে যাচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। থানার বাইরে থাকা সাদা হ্যালোজেনে সেই বালিবোঝাই ট্রাক্টর ধরা পড়লেও পুলিশের মুখে রা নেই। যেমনটা ছিল না লকডাউনে, আনলক ওয়ানে। ঠিক তেমনই আনলক টু’তেও (Unlock 2) বালিপাচার নিয়ে পুলিশের মুখে কুলুপ। কিন্তু কেন?

PRL-sand2

ডুড়কু, দোলদাঁড়ি, ডুমুরশোল, কোটলয়, উচালি, চাকলতোড়-সহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, “সব সেটিং হয়ে আছে দাদা। পানীয় জলে টান পড়লে কার কী এসে যায়?” ক্ষোভে ফুঁসছে নদীর আশপাশে থাকা প্রায় ১৫-১৬টি গ্রাম। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সুপ্রিয় দাস বলেন, “আমাদের কাছেও অভিযোগ এসেছে। পুলিশ সুপারকে আমরা চিঠি লিখছি।”

[আরও পড়ুন: আমফানের ত্রাণ দুর্নীতিতে কড়া শাস্তি, সাসপেন্ড হাওড়ার ৩ তৃণমূল নেতা]

কয়েকদিন আগেই এই এলাকার টামনা ফাঁড়ি লাগোয়া একাধিক গ্রামকে নিয়ে এই এলাকায় আরও ভাল পরিষেবার লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে থানা। কিন্তু কোথায় কী? বালিপাচার যেন আরও জাঁকিয়ে বসছে কাঁসাই নদীর বুকে। এই এলাকা বলরামপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অধীনে। সেখানকার বিধায়ক তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর কানেও গিয়েছে এই বালি পাচারের কথা। ক্ষুব্ধ মন্ত্রী বলেন, “এখন তো বালি উত্তোলনের কাজই বন্ধ। কীভাবে চলছে? পুলিশ প্রশাসনকে এখনই বন্ধ করতে হবে।” কিন্তু তা কার্যকর হবে কবে, প্রশ্ন তুলছেন এলাকার মানুষজনই। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস.সেলভামুরুগন বলছেন, “এখন কোথাও বালি উত্তোলনের
অনুমতি নেই। জোরদার নজরদারি চলছে। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” সেই অপেক্ষাতেই কাঁসাইয়ের পাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বিস্তীর্ণ জনপদ।

ছবি: অমিত সিং দেও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement