Advertisement
Advertisement

Breaking News

Samaresh Majumdar

ফেরা হল না ছোটবেলার শহরে, সমরেশ-প্রয়াণে অশ্রুসিক্ত জলপাইগুড়ির বাবুপাড়া

বাবুপাড়ার পাঠাগারে এখনও রয়ে গিয়েছে তাঁর হাতে লেখা নোটটি।

Samaresh Majumdar wanted to back childhood city Jalpaiguri, they remember and mourn | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 9, 2023 9:54 am
  • Updated:May 9, 2023 9:57 am  

শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: শেষ বয়সে সবুজ শহরে ফেরার ইচ্ছে ছিল তাঁর। ২৮ বছর আগে ৫১ বছরের ‘কালবেলা’র লেখকের ইচ্ছের কথা মনে পড়তেই চোখের জল ফেললেন জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহরের বাবুপাড়া পাঠাগারের সহ-সম্পাদক, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তপন ঘোষ। ১৯৯৫ সালে বাবুপাড়া পাঠাগারের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে নিজের শহরে এসেছিলেন ‘উত্তরাধিকার’-এর স্রষ্টা সমরেশ মজুমদার (Samaresh Majumdar)। তাঁর প্রয়াণে মঙ্গলবার দিনভর বন্ধ থাকবে বাবুপাড়া পাঠাগার। 

জলপাইগুড়ি জেলার গয়েরকাটা চা বাগানে জন্ম হলেও সমরেশ মজুমদারের বেড়ে ওঠা এই শহরে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে পড়াশোনা।  সাহিত্যিকের প্রয়াণ সংবাদে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধর্মচাঁদ বাড়ুই জানিয়েছেন, ইচ্ছে আছে গ্রীষ্মের ছুটির মধ্যে তাঁর জন্য একটি স্মরণসভা করার। তাতে সমরেশ মজুমদারের সহপাঠীদেরও আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। 

Advertisement

[আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত নিয়োগ বাতিল নয়, স্কুলগুলিকে চিঠি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের]

বাবুপাড়া পাঠাগারই (Library) ছিল ‘কালপুরুষ’-এর লেখকের বই সমুদ্রে ডুব দেওয়ার প্রথম ঠিকানা। বাবুপাড়া পাঠাগারের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের স্মারক পত্রিকায় কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে সমরেশ মজুমদার লিখেছেন, “আমার বাড়ি তিস্তার পাশে হাকিম পাড়ায়। বাড়িতে গল্পের বই পড়ার রেওয়াজ ছিল না। অভ্যেসটা করিয়ে দিয়েছিলেন পাড়ার কৃষ্ণাদি। সেই ক্লাস সিক্সেই যখের ধন আর নীহাররঞ্জন। অনেক পরে যখন নীহাররঞ্জনের খুব ঘনিষ্ঠ, তখন তাঁকে বলেছি কীভাবে পড়ার বইয়ের নিচে রেখে তাঁর বই লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম। কিন্তু কৃষ্ণাদির স্টক ফুরিয়ে যাওয়ার পর ফাঁপড়ে পড়তাম। বই পড়ার নেশা ধরে গেছে আমার। কে বলেছিল বা নিয়ে গিয়েছিল আজ মনে নেই বাবুপাড়া পাঠাগারে উপস্থিত হয়ে ছিলাম। সুনীলদা বিশ্বাস করতে অসুবিধা হয় মানুষটির চেহারা আজও একই রকম রয়ে গেছে,আমাকে পাঠাগারের সদস্য করে নিলেন। একজায়গায় তিনি লিখেছেন, ওরা পাঠাগার খুলতে দেরি করলে খুব রাগ হত। আমার তখন সমুদ্রে ডুব দেওয়ার অবস্থা।”

[আরও পড়ুন: রবি ঠাকুরের মন্দির, দু’বেলা পুজো পান বাঙালির হৃদয়ের দেবতা, কোথায় জানেন?]

বাবুপাড়া পাঠাগারের সহ সম্পাদক তথা প্রাক্তন শিক্ষক তপন ঘোষ জানান, পাঠাগারের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি স্মারক পত্রিকার জন্য ‘আমি কৃতজ্ঞ’ নামে এই লেখাটি লিখে ছিলেন সমরেশ মজুমদার। অনুষ্ঠানে এসে দীর্ঘ সময় পাঠাগারে বসে আড্ডা দেন। সেখানেই ছেলেবেলার গল্প। গয়েরকাটা চা বাগান, আঙরাভাসা, ডুডুয়া, গিলান্ডি নদী, জেলা স্কুলের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি শেষ বয়সে ছেলেবেলার শহরে ফিরে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করে ছিলেন লেখক।

Samaresh Majumdar admitted to ICU for Respiratory tract infections

১৯৯৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর পাঠাগারের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগদিতে এসেছিলেন ‘অর্জুন’-এর লেখক। এসে জানতে পারেন, তাঁর ছেলেবেলার পাঠাগারে সময়মতো চাঁদা না দেওয়ার জন্য তার নাম বাদ দিয়েছে। সেদিন পাঠাগারের অটোগ্রাফ খাতায় সমরেশ মজুমদার লিখেছিলেন, “আমি আজীবনের সদস্য ছিলাম। জমা চাঁদা দিই না বলে হয়তো সদস্য পদ নেই। কিন্তু মনের দিক থেকে আমি আজও আপনাদের একজন। মনের মানুষ হবার জন্য চাঁদার দরকার হয় না।”

সেই মনের মানুষের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না পাঠাগারের সদস্যরা। তপন ঘোষ বলেন, “অপেক্ষায় ছিলাম। ফিরে আসবেন। পাঠাগারে এসে আবার আড্ডা জমাবেন।” কিন্তু সব অপেক্ষারই যেন ইতি ঘটলো সোমবার। সন্ধ্যায় খবর এল, সমরেশ মজুমদার নেই। বন্ধ হয়ে গেল পাঠাগারের আলো। অন্ধকারে ডুব দিল তাঁর প্রিয় লেখক নীহাররঞ্জন আর তাঁর লেখা, ‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’, ‘মৌষলকাল’ বইগুলি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement