সৌরভ মাজি, বর্ধমান: অসুস্থ অবস্থায় পথের ধারে পড়ে ছিলেন এক যুবক। কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে তা চোখে পড়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডুর। গাড়ি ডেকে নিজেই ওই ভবঘুরে যুবককে তুলে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেন তিনি। কিন্তু সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা ওই যুবক ভরতি নিতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ।
সহকারী সভাধিপতির দাবি, নিজের পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও রোগীর পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতিতে ভরতি করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ সহকারী সভাধিপতি। তিনি দাবি করেন, এভাবে কোনও রোগীকে ভরতি নিতে অস্বীকার করতে পারেন না ডাক্তাররা। আগে রোগীর চিকিৎসা, তারপর অন্য কিছু। বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনার পর জরুরি বিভাগের সহায়তায় ওই রোগীকে ভরতি নেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, বছর পঁয়ত্রিশের অসুস্থ যুবকের নাম অমর ক্ষেত্রপাল। বাড়ি গলসি থানার বড়দিঘি এলাকায়। তিনি ভবঘুরে। শুক্রবার সকালে বর্ধমান শহরের বাদামতলা এলাকায় জিটি রোডের ধারে পড়েছিলেন। সমবায় সপ্তাহ উপলক্ষে এক কর্মসূচি গিয়ে ওই যুবককে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু। তিনি সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ডাকেন। জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ও আরও কয়েকজনকে নিয়ে ওই যুবককে গাড়িতে তুলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। দেবুবাবু অভিযোগ করে বলেন, “জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলেও বাড়ির লোক না এলে চিকিৎসা করা যাবে না বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান। কিন্তু এটা কেন হবে? আগে রোগীর চিকিৎসা হোক, তারপর ফর্মালিটি। আমি নিজের পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও রোগীকে ভরতি নিতে চাইছিলেন না ডাক্তাররা। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। পাশাপাশি, আমি কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বলি – আমি দেবু টুডু, আমিই দায়িত্ব নিয়ে ভরতি করছি। ভরতির কাগজে সই করছি।”
শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে ওই রোগীকে ভরতি নেওয়া হয়। সহকারী সভাধিপতি বলেন, “কোনও রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বাড়ির লোক নেই বলে চিকিৎসা করা যাবে না, এটা ঠিক নয়। আগে মানুষ পরিষেবা পাক। এই নিয়ে যেখানে যা জানানোর আমি জানিয়েছি।” ঘটনার সময় সেখানে থাকা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীর আত্মীয়রাও চিকিৎসকদের এই কথা শুনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, প্রায়ই রোগীর সঙ্গে এমনটা করা হয়।
জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি যে কোনও কার্যালয়ে গেলে তাঁর প্রতি ন্যূনতম সৌজন্য দেখানো হয়। কিন্তু শুক্রবার দেবু টুডুর প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাও দেখাননি বলে অভিযোগ। হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপ্যাল প্রবীর সেনগুপ্তকে এ নিয়ে বারবার ফোন করা হলেও, তিনি প্রথমে ফোন ধরেননি। পরে তিনি বলেন, “একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমরা জানতে পেরেই পদক্ষেপ করেছি। রোগীকে ভরতি করাও হয়েছে। চিকিৎসাও চলছে।” তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিকের কথায়, “একটা ঘটনা ঘটেছিল। আমাদের কাছে ফোন আসার পরেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ওই রোগীকে ভরতি করা হয়েছে। রাধারানি ওয়ার্ডের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন ওই রোগী।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.