অংশুপ্রতিম পাল, সবং: সবং বিধানসভার উপনির্বাচনে তৃণমূলের জয়জয়কার। রেকর্ড ৬৪ হাজার ১৯২ ভোটে এই কেন্দ্রে জিতলেন ঘাসফুল প্রতীকের প্রার্থী গীতারানি ভুঁইয়া। বিপুল ব্যবধানে জয়ের পাশাপাশি শাসক দল ভোট বাড়িয়ে নিয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি এই প্রথম সবংয়ে জিতল তৃণমূল।
[সবংয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী, তিন নম্বরে বিজেপি]
সকাল দেখলেই বাকি দিনের ইঙ্গিত মেলে। সবংয়ের গণনায় শুরুতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ফল কী হতে চলেছে। তৃণমূল জিতবে এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের কোনও প্রশ্ন ছিল না। কত মার্জিন এবং দ্বিতীয় কে হচ্ছেন তা নিয়ে ছিল যাবতীয় কৌতূহল। সেখানে দেখা গেল স্বামী মানস ভুঁইয়ার জয়ের ব্যবধানও ছাপিয়ে যান গীতাদেবী। প্রথম রাউন্ড থেকে তিনি লিড নিয়েছিলেন। এর প্রতি রাউন্ডে তিনি ব্যবধান বাড়াতে থাকেন। ১৬ রাউন্ড গণনা শেষে তৃণমূল প্রার্থী পান ১,০৬,১৭৯ ভোট। গীতারানি ভুঁইয়া ৬৪ হাজার ১৯২ ভোটে জয়ী হন। দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেন সিপিএম প্রার্থী বামপ্রার্থী রীতা মণ্ডল জানা। সিপিএম প্রার্থী পান ৪১,৯৮৭ ভোট। বিজেপি প্রার্থী অন্তরা ভট্টাচার্য পক্ষে যায় ৩৭,৪৭৬ ভোট। এবার সবংয়ে মোট ভোট পড়েছিল ২,০৭,৩১৪। প্রদত্ত ভোটের হিসাবে অর্ধেকের বেশি পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। গত বছর বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে ৩৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। এবার ১৫ শতাংশের বেশি ভোট বাড়িয়ে নিল শাসক দল। বিজেপি এই আসনে লড়াই দেওয়ার কথা বললেও প্রাপ্ত ভোটে তাদের স্থান তিন নম্বরে। তবে বামেদের থেকে পদ্ম শিবির চার হাজার ভোট কম পায়। গতবার এই কেন্দ্র কংগ্রেস জিতলেও এবার তাদের জামানত জব্দ পেয়েছে। চার নম্বরে থাকা কংগ্রেস প্রার্থী চিরঞ্জীব ভৌমিকের প্রাপ্ত ভোট ১৮,০৬০।
[আগামী বছর হজে যাওয়ার জন্য আবেদন রেকর্ড সংখ্যক মুসলিম মহিলার]
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে সবংয়ের এই ফল বুঝিয়ে দিল গ্রামীণ বাংলায় তৃণমূলের প্রভাব এখন নিরষ্কুশ। আগামী পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটে শাসক দলের আধিপত্যে ফাটল ধরানোর মতো এখনও কোনও শক্তি তৈরি হয়নি। মুকুল রায় দল ছাড়ার পর শাসক দলের সংগঠনের হাল ধরা নিয়ে নানা কথা হলেও তার কোনও প্রভাব পড়েনি সবংয়ের ভোটে। এই কেন্দ্রটি কংগ্রেস এবং বামেদের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। দল তৈরি হওয়ার পর এই প্রথম সবংয়ে জিতল তৃণমূল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন গত বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে এবার তৃণমূল ১৫ শতাংশ ভোট বাড়িয়ে নিয়েছে। মানস ভুঁইয়া গত বার ৫০ হাজার ১৬৭ ভোটে জিতছিলেন। সেই ব্যবধানও অতিক্রম করলেন তাঁর স্ত্রী। পাশাপাশি ওই কেন্দ্রে বিরোধী ভোট আগের থেকে বেশ কিছুটা কমেছে। বিরোধী ভোট সম্মিলিত করলেও তা শাসক দলের কাছাকাছি আসছে না। একইসঙ্গে এই নির্বাচন দেখিয়ে দিল দ্বিতীয় স্থানে শেষ করলেও বামেদের ক্ষয় চলছেই। তবে মুখরক্ষায় বিজেপি দাবি করেছে গতবার ২.৫ শতাংশ থেকে তাদের ভোট বেড়ে হয়েছে ২০ শতাংশর কাছাকাছি। এই ফল যে তাদের পক্ষে যে হতাশার তা বুঝিয়ে দিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি জানান, দ্বিতীয় হলে বিজেপি সন্তুষ্ট হত। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এই নির্বাচন দেখিয়ে দিল গত কয়েকটি ভোটের মতো শাসক দলের ভোটব্যাঙ্ক আঁচড় কাটা দূরের কথা, উলটে তৃণমূলের ভোট বেড়ে চলেছে। আর কয়েক দিন পর উলুবেড়িয়া লোকসভা ও নোয়াপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। সবংয়ের ফল শাসক দলকে স্বস্তি দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ছবি: সৈকত পাঁজা
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.