সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিল্লি থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব কতখানি? সে প্রশ্ন বৃথা। ধর্ষিতার যন্ত্রণা তো সীমানাভেদে আলাদা হয় না। যে কষ্ট নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে গিয়েছিলেন নির্ভয়া, সেই একই কষ্ট নিয়ে এখন মালদা মেডিক্যালে মৃত্যুর সঙ্গে যুঝছেন কুশমণ্ডির আদিবাসী ধর্ষিতা। কিন্তু দুটো পৃথক ঘটনায় নাগরিক সমাজের ভূমিকা কেন আলাদা? প্রশ্ন উঠেছে, এই ব্যবহারের বৈষম্য নিয়ে। শিরোনামের প্রশ্ন তাই ক’দিনে অনেকেকেই কুরে কুরে খেয়েছে।
[ ফিরল নির্ভয়া স্মৃতি, ধর্ষণের পর আদিবাসী তরুণীর উপর নারকীয় অত্যাচার ]
দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয়েছিল গোটা দেশ। ব্যতিক্রম নয় বাংলাও। মোমবাতি মিছিল থেকে শুরু করে ছোট-বড় নানা মঞ্চে উঠে এসেছিল প্রতিবাদ। মানুষ নাকি শ্রেষ্ঠ সমাজবদ্ধ জীব! অথচ মাঝেমধ্যে তার আচরণ এমন নিকৃষ্ট হয়ে ওঠে যে তা পশুদের ব্যবহারকেও হার মানায়। মানুষ হয়ে মানুষকে ফের প্রমাণ করতে হয় যে, সে আদতে মানুষই ছিল। তা হোক। তবু সময়ে সময়ে তা দরকারি হয়ে ওঠে। নির্ভয়ার চলে যাওয়ার দিন চোখের জল মুছে অনেকেই সেই অনুভবকে ছুঁতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেই একই মানুষ কেন কুশমণ্ডি কাণ্ডে এমন নীরব। জানা গিয়েছে, ধর্ষিতা আদিবাসী। মানসিকভাবেও হয়তো তেমন সুস্থ হন। সেই সুযোগ নিয়ে কতিপয় দুষ্কৃতী চড়াও হয় তাঁর উপর। ধর্ষণের পর নারকীয় অত্যাচার চলে ওই তরুণীর উপর। যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, ধাতব কোনও অস্ত্র। এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি। কিন্তু বাঙালি সুশীল শিক্ষিত সমাজ এ নিয়ে আশ্চর্য নীরব। গোটাকয় ফেসবুক স্টেটাস আর হোয়্যাটসঅ্যাপে আহা-উঁহুর বদলে আর কিছুই তেমন চোখে পড়েনি।
[ কুশমণ্ডি ধর্ষণকাণ্ডে গ্রেপ্তার আরও এক, শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল নির্যাতিতার ]
তবে কি আজ মনুষ্যত্বও আটকে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়?
সোশ্যাল মিডিয়াই জানাচ্ছে, তা নয়। এই মঞ্চ থেকেই প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন, সায়নী সিনহা রয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে তিনি একটি পোস্ট করেন। ডাক দেন পথে নামার। কী কী দাবিতে পথে নামবেন, তাও স্পষ্ট করে দেন।
অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে। ৬০০-রও বেশি মানুষ এই পোস্ট শেয়ার করে জানান, প্রতিবাদ দরকার। প্রতিশ্রুতি দেন পাশে থাকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় থেকে প্রতিবাদ এগোয় বাস্তবায়নের দিকে। পরবর্তী পোস্টে তিনি জানান, শনিবার ধর্মতলায় সকলে একজোট হবেন। সকাল ১১টা থেকে শুরু হবে এই কর্মসূচি। কালো কাপড়ে মুখ বেঁধে প্রতিবাদ জানানো হবে এই নারকীয় ঘটনার। কর্মসূচির বিস্তারিত রূপরেখা জানতে পোস্টে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়েছিল, যদিও যে কোনও কারণেই হোক কোনও সাড়া মেলেনি। তবে ওই পোস্টে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, বিক্ষোভ মানেই অবরোধ নয়।
যদি এই প্রতিবাদ সম্ভব হয়, তবে হয়তো হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণার উপশম হবে না নিগৃহীতার। তবু সাধারণ মানুষ হিসেবে নাগরিক মনের যে ক্ষত, তাতে হয়তো একটু হলেও প্রলেপ পড়বে। মানুষ হয়ে মানুষের সমাজে মুখ দেখাতে পারব আমরাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.