সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে প্রায় চাকার নিচে চলে যাচ্ছিলেন এক যাত্রী। দ্রুতগতিতে দৌড়ে পড়ে যাওয়া সেই যাত্রীকে বাঁচালেন এক আরপিএফ জওয়ান। কয়েক মুহূর্তের সেই অপারেশন স্তব্ধ হয়ে দেখলেন সকলে। মঙ্গলবার সন্ধেবেলা এমনই এক নাটকীয় ঘটনার সাক্ষী রইলেন পুরুলিয়া স্টেশনের যাত্রীরা।
মঙ্গলবার সন্ধে সাড়ে ছ’টা নাগাদ পুরুলিয়া স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যাচ্ছিল ১২৮০২ নিউ দিল্লি–পুরী পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস। ট্রেনটি ছেড়ে দেওয়ার পর তাতে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন জামশেদপুরের এক যাত্রী। ভারসাম্য রাখতে না পেরে প্রায় ট্রেনের চাকার নিচে চলে যাচ্ছিলেন তিনি। সেসময় প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত রেলরক্ষী বাহিনীর জওয়ান জয় শম্ভুর নজরে আসে ঘটনাটি। প্রায় ট্রেনের তলায় চলে
যাওয়া ওই যাত্রীকে টেনে তুলে তাঁর জীবনদান করেন আরপিএফ জয় শম্ভু। আদ্রা ডিভিশন ওই জওয়ানের এমন তৎপরতা ও সাহসী কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছে। রেলরক্ষী বাহিনীর জওয়ান জয় শম্ভু অবশ্য তা নিয়ে তেমন উল্লসিত নন। তিনি মনে করছেন যে নিজের কর্তব্যটুকুই করেছেন।
কিন্তু কেন ঘটল এমন ঘটনা? যাত্রী কি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন না? জানা যাচ্ছে, জামশেদপুরের ডিমনা রোডের বাসিন্দা কৈলাস প্রসাদ গুপ্তা নিউ দিল্লি থেকে পুরুষোত্তম এক্সপ্রেসে চড়েছিলেন। তাঁর গন্তব্য ছিল টাটা বা জামশেদপুর। তাঁর সংরক্ষিত আসন ছিল এস–সিক্স কামরার ১২এ। ওই দিন সন্ধেয় ট্রেনটি পুরুলিয়া স্টেশনে ঢুকতেই তিনি জল নিতে নামেন। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেলেও কৈলাস গুপ্তা নিজের কামরায় পৌঁছতে পারেননি। ফলে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া ওই ট্রেনের নির্ধারিত কামরায় উঠতে গিয়ে পিছলে পড়ে যান। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তিনি ট্রেনের দরজার হাতল ধরে কোনওক্রমে বাঁচার চেষ্টা করছেন। তা চোখে পড়ামাত্রই সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান আরপিএফ জওয়ান জয় শম্ভু। কৈলাসবাবুকে তুলে নিয়ে আসেন।
পরে কৈলাসবাবু জানান, “ওই আরপিএফ জওয়ানের জন্য পুনর্জন্ম হল। যেভাবে রেললাইনের ট্র্যাকের দিকে নেমে যাচ্ছিলাম, তাতে মনে হচ্ছিল মৃত্যু নিশ্চিত। তবু স্নায়ু ঠিক রেখে ট্রেনের দরজার হাতল শক্ত করে ধরে রেখেছিলাম। ওই অবস্থায় আরপিএফ জওয়ান টেনে তোলেন।” কিছুদিন আগে এই স্টেশনেই একইরকম তৎপরতার সঙ্গে এক যাত্রীকে বাঁচিয়ে প্রচারের আলোয় আসে আরপিএফ। রেলরক্ষী বহিনীর এমন ভূমিকায় যাত্রীদের মধ্যে ভরসা বাড়ছে বলে দাবি রেলকর্তাদের। তবে এদিন জয় শম্ভু যে কাজ করলেন, তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.