দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: লবণাক্ত মাটিতে চাষ তেমন ভাল হয় না। আর তার উপর আবার করোনা পরিস্থিতি। তাই ভিনজেলায় গিয়ে পেটের খাবার জোগাড় করা সম্ভব নয়। কিন্তু পেট বড় বালাই। খাওয়াদাওয়া যে করতেই হবে। তাই তো একের পর এক মৎস্যজীবী (Fisherman) বিপদের আশঙ্কা সত্ত্বেও পা বাড়াচ্ছেন গভীর জঙ্গলে। পেটের দায়ে প্রাণকে বাজি ধরছেন তাঁরা। তাতেই ঘটছে অঘটন। গত চারদিনে সুন্দরবনে প্রাণ হারালেন মোট তিনজন মৎস্যজীবী। করোনা পরিস্থিতিতে বাঘের হামলায় মৃত্যু হয়েছে মোট ১৬ জন মৎস্যজীবীর। যার ফলে শোকের ছায়া নেমেছে গোটা এলাকায়।
রবিবার সকালে তিনজন মৎস্যজীবীর একটি দল গোসাবা ব্লকের সাতজেলিয়া দ্বীপ থেকে সুন্দরবনের (Sunderban) ঝিলার ৬ নম্বর জঙ্গলে গিয়েছিল কাঁকড়া সংগ্রহ করতে। ওই মৎস্যজীবীদের দলটি যখন কাঁকড়া সংগ্রহ করতে জঙ্গলে নামে তখন হঠাৎ তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘ। গোপাল বৈদ্য নামে ষাটোর্ধ্ব এক মৎস্যজীবীকে নিয়ে পালিয়ে যায় বাঘটি। অন্য দুই সঙ্গী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও বাঘের কবল থেকে উদ্ধার করে আনতে পারেনি তাঁকে। আতঙ্কে দুই মৎস্যজীবী ফিরে আসেন। সজনেখালি রেঞ্জ অফিসে বাঘের আক্রমণের কথা জানান। মৎস্যজীবীদের এই দলটি সরকারি অনুমতি নিয়েই জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিল। সজনেখালি বনদপ্তরের অফিস থেকেই তাঁরা অনুমতিপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। এই ঘটনার পর থেকে কান্নার শব্দে ভারী সুন্দরবনের সাতজেলিয়া গ্রাম।
অনেকেরই অভিযোগ, একের পর এক মৎস্যজীবী বাঘের হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও বনদপ্তরের কোনও মাথাব্যথা নেই। বনদপ্তর আরও সচেতন হলে সরকারি অনুমতি ছাড়া কাঁকড়া সংগ্রহ করতে হয়তো পারতেন না মৎস্যজীবীরা। তার ফলে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটত না।
যদিও বনদপ্তর (Forest Department) সেই অভিযোগ মানতে নারাজ। পরিবর্তে দাবি করা হচ্ছে, মৎস্যজীবীদেরকে জঙ্গলে বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মাইকিং, লিফলেট বিলি চলছে। তবে তা সত্ত্বেও মৎস্যজীবীদেরকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু কেন তাঁদের রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না? এ বিষয়ে ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস বলেন, “বিকল্প জীবিকার অভাবই মৎস্যজীবীদের জঙ্গলমুখী করে তুলছে। শুধু তাই নয় অতিরিক্ত আয়ের লোভে বনদপ্তরের নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অনেকেই জঙ্গলে যাচ্ছেন। আর সে কারণেই ঘটছে একের পর এক প্রাণহানি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.