দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: ঘূর্ণিঝড় আমফান যেন সমস্ত ভয় দূর করে দিয়েছে সুন্দরবনবাসীর। তাই নদীর এক পাড়ে যখন গর্জন করে ঘুরছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, ঠিক তখনই অন্যপাড়ে খোলা আকাশের নিচে বাঁধের উপরের আশ্রয়ে দিন কাটাচ্ছে বহু পরিবার। যদিও আমফান পরবর্তীতে সুন্দরবনের এই অসহায় মানুষগুলোর কাছে বাঘের হুংকার শুনে কান চেপে শুয়ে থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই!
মাত্র কয়েকটা দিন আগেই সুপার সাইক্লোন আমফান আঘাত হেনেছিল সুন্দরবনের প্রতিটা দ্বীপ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে পালটে গিয়েছে গোটা সুন্দরবনের ছবি। ঝড়ের রোষ থেকে বাদ যায়নি ম্যানগ্রোভের জঙ্গলও। শুধু তাই নয়, আমফানের তাণ্ডবে সুন্দরবনে বাঘ আটকানোর জন্য জঙ্গল লাগোয়া এলাকাগুলিতে ফেন্সিং বা যে সুরক্ষার জাল লাগানো ছিল তা প্রায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। ফলে যখন তখন ইচ্ছে হলেই এখন লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারে দক্ষিণরায়।
অন্যদিকে আমফান পরবর্তীতে কুমিরমারি এলাকায় বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। বসতভিটে টুকু না থাকায় কেউ কেউ থাকছেন নদী বাঁধের উপর। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাঘ এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সব মানুষদের কাছেই। সন্ধে নামতেই এক অজানা আতঙ্ক গ্রাস করছে তাঁদের। কারণ, এই বুঝি বাঘ নদী পেরিয়ে চলে এল এপারে! বৈকুণ্ঠ সরদার, সমর মণ্ডল, কালু বিশ্বাসরা বলেন, প্রায় প্রতি বছরই এই গ্রামের আশপাশে বাঘ হানা দেয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আগের মতো নয়। এখন চারিদিকে কোথাও কোনও আলো নেই। সন্ধে নামলেই অন্ধকার নেমে আসছে গ্রামে। তার উপর জঙ্গলে মুহুর্মুহু হুংকার দিচ্ছে বাঘ। ফলে ভয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত। এ বিষয়ে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিলড ডিরেক্টর ডক্টর সুধীর কুমার দাস বলেন, “ঝড়ের দিন থেকেই আমাদের কর্মীরা ট্রাংকুলাইজার নিয়ে তৈরি আছেন। বসিরহাট রেঞ্জ এবং সজনেখালি রেঞ্জে রাখা হয়েছে তাঁদেরকে। গ্রামে বাঘ বের হওয়ার খবর পেলেই তড়িঘড়ি সেগুলিকে জঙ্গলে ফেরত পাঠানো হবে।” বনদপ্তর বিষয়টি নিয়ে যাই বলুক না কেন তাতে আতঙ্ক কমছে না। তবে হ্যাঁ, এই কয়েকদিনে যেন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে বাঘের গর্জন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.