সুমিত বিশ্বাস ও সুনীপা চক্রবর্তী, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম: ঝাড়খণ্ডের পালামৌ থেকে আসা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কি নতুন বিচারণ ক্ষেত্রের সন্ধানে? না হলে জিনাত সঙ্গী ওই বাঘ দু’বার দলমায় গিয়েও আবার কেন বাংলায় আসবে? ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের বাঘিনী জিনাত আটদিন কাটিয়ে গিয়েছিল। সেই পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়কে ঘিরেই কি জিনাত সঙ্গীর নতুন ‘টেরিটরি’ তৈরি হচ্ছে? পরপর দু’বার দলমা হয়ে আবার বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়ে চলে আসার ঘটনায় এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বনদপ্তরে। সেইসঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এমনকি বাঁকুড়ার বনমহলের একাংশ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের টেরিটরি হয়ে যাওয়ায় এই বিষয়টিকে আর হালকা ভাবে নিতে পারছে না রাজ্যের বনবিভাগ। চলতি মাসের ২৮ তারিখ, শুক্রবার বান্দোয়ানের কুইলাপালে রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা রাজ্যের বনকর্তাদের নিয়ে এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ইস্যুতে বৈঠকে বসছেন। ওই বৈঠকে থাকার কথা রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল দেবল রায়ের।
পশ্চিমাঞ্চলের এই বিস্তীর্ণ এলাকা যদি বাঘের টেরিটরি হয়ে যায়, তাহলে সুন্দরবনের সঙ্গে এই বনমহলের নাম জুড়ে গিয়ে বনদপ্তরের মানচিত্রে এই এলাকা সমৃদ্ধ হবে। একইসঙ্গে বন্যপ্রাণ-মানুষ সংঘাত কমিয়ে স্থানীয় মানুষজনের সুরক্ষায় পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে হবে, যাতে কোনভাবেই এই সংঘাতে প্রাণহানি না ঘটে। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পশ্চিম চক্র) বিদ্যুৎ সরকার বলেন, “ঝাড়খণ্ডের পালামৌ থেকে আসা এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দলমা থেকে পুরুলিয়া ২০ কিমি ব্যাসার্ধ জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাঘের টেরিটরির ক্ষেত্রে এটি একেবারেই স্বাভাবিক। তবে বান্দোয়ানের রাইকা পাহাড়কে ডেরা করেই ওই বন্যপ্রাণের নতুন বিচরণ ক্ষেত্র কিনা, তা বুঝতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। এই সমস্ত বিষয়ে আমাদের বৈঠক রয়েছে।”
এদিকে সোমবার বাঁকুড়া সীমানা ছুঁয়ে থাকা বান্দোয়ানের পাঁড়রা এলাকাতে জিনাত সঙ্গীর পদচিহ্ন মেলে। তারপর ওই এলাকা থেকে দক্ষিণরায় ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির দিকে পাড়ি দিয়েছে। বান্দোয়ানের কাটাগোড়ার দিক থেকে বাঁশপাহাড়ি অঞ্চলের রামপুর ও ধরমপুরের মাঝে আলু ও শশা জমির উপর প্রচুর পায়ের ছাপ মঙ্গলবার সকালে দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। পায়ের ছাপ চলে গিয়েছে জামিরডিহা হয়ে কাঁকড়াঝোড়ের জঙ্গলের দিকে।
রাইকা পাহাড়ের আয়তন আড়াই হাজার হেক্টর। এই পাহাড় জঙ্গলের উচ্চতা ১,৫৪৪ ফুট। এই পাহাড়ের মধ্যেই রয়েছে ভাঁড়ারি টিলার জঙ্গল। এই উঁচু জঙ্গলই জিনাতের যেমন পছন্দের ছিল। তেমনই তার পুরুষসঙ্গীর। তাই বাংলায় প্রবেশ করলেই চারপাশ ঘুরে রাত কাটাচ্ছে রাইকার ভাঁড়ারিতেই। এই এলাকায় চেকড্যাম ছাড়া একাধিক পাহাড়ি ঝোরা যেমন রয়েছে, তেমনই আছে বাঘের পর্যাপ্ত খাবার। অসংখ্য বন শূকর, হরিণ, খ্যাঁকশিয়াল। তবে শুধু রাইকা নয়। রাইকা থেকে দলমা এই বিস্তীর্ণ পথে ওই বাঘের খাবারের অভাব নেই। তাই রাইকাকে ডেরা করে পূর্ব দিকে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর, পশ্চিমে দলমা, উত্তরে পুরুলিয়ার মানবাজার ২, দক্ষিণ বাঁকুড়া, দক্ষিণে পূর্ব সিংভূমের ঘাটশিলা, দুমকাকোচা এই বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন টেরিটরি হয়ে গিয়েছে জিনাত সঙ্গীর। এমনটাই প্রাথমিক অনুমান বনবিভাগের।
ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটির কাছে এই বাঘের কোনও রেকর্ড না থাকলেও ঝাড়খণ্ডের পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ছত্রিশগড়ের বলরামপুর অর্থাৎ গুরু-ঘাসিদাস ন্যাশনাল পার্ক এলাকাতে ট্র্যাপ ক্যামেরায় বন্দি হয়েছিল এই জিনাত সঙ্গী। তারপর ওই বছরেই মে-জুন মাসে পালামৌতে ক্যামেরাবন্দি হয় বাঘ। কিন্তু তাকে পালামৌ টাইগার রিজার্ভের সদস্য হিসেবে মানতে চাইছেন না কর্তৃপক্ষ। একই বক্তব্য ছত্তিশগড়েরও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.