স্টাফ রিপোর্টার, ঝাড়গ্রাম: বাঘিনী কাবু করতে যেন চাকুলিয়ার জঙ্গলে যেন মহারণ চলছে! ঘুমপাড়ানি গুলি এড়িয়ে বেঁধে রাখা টোপ মহিষ শাবকটিকে শিকার করে নিয়ে পালাল বাঘিনী জিনাত। বনদপ্তরের দক্ষ শিকারির ছোঁড়া গুলি যেভাবে এড়িয়ে গিয়ে শিকার করেছে বাঘিনীটি তা দেখে অবাক দপ্তরের কর্তারা। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভূম জেলার জামসেদপুর ডিভিশনের চাকুলিয়া রেঞ্জের চিঁয়াবান্ধি জঙ্গলে বহালতবিয়তে রয়েছে বাঘিনীটি। তার নাম জিনাত। শাল, ইউক্যালিপটাস অরণ্য সমৃদ্ধ পাঁচ থেকে ছয় কিমি লম্বা জঙ্গলে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছে বাঘিনীটি। জঙ্গলের ভিতরে শিকার তো করছেই। সেই সঙ্গে বনদপ্তরের দেওয়া টোপও সাবাড় করেছে সে।
শুক্রবার ভোরে তখন সদ্য আলো ফুটেছে। হলুদ কালো ডোরাকাটা জিনাত গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে টোপের দিকে। ট্রাঙ্কুইলাইজাজিং টিমের সদস্যদের অতন্দ্র চোখের সামনে থেকেই নিমেষে শিকার করে জঙ্গলে মিলিয়ে গিয়েছে। পর পর ঘুম পাড়ানি গুলি ছুটলেও সেগুলির ওকটিও ছুঁতে পারেনি বাঘিনীটিকে। এদিকে পূর্ব সিংভূম জেলার বনদপ্তরের পক্ষ থেকে ওই জঙ্গলটি পুরো ঘিরে রাখা হয়েছে। বাঘিনীটি যাতে কোনওভাবে ওই জঙ্গল ছেড়ে অন্য কোনওদিকে পালিয়ে যেতে না পারে সেই জন্য জিপিএসের মাধ্যমে সর্বক্ষণ অবস্থান দেখা হচ্ছে। ছদিন পেরিয়ে গেলেও বাঘটিকে এখনও খাঁচাবন্দি না করতে পারায় আতঙ্ক এখনও জিইয়ে আছে। ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি এবং বেলপাহাড়ি থেকে ১০-১২ কিমি দূরে চিঁয়াবান্ধির জঙ্গলে বাঘটি এখনও থাকায় আতঙ্ক রয়েছে।
বেলপাহাড়ির ঝাড়খণ্ড সীমানা এলাকার কাকড়াঝোড়, আমলাশোল, বাঁশপাহাড়ি -সহ বিভিন্ন গ্রামগুলিতে সন্ধ্যার পর মানুষজন খুব একটা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। অন্যদিকে, জামবনি ব্লকের গিধনি রেঞ্জের বিভিন্ন সীমানা এলাকার ওড়, আমতোলিয়া, লালবাঁধ, বাঁকড়া-সহ বিস্তীর্ণ গ্রামগুলিতেও আতঙ্ক জড়িয়ে রয়েছে। এদিন ঝাড়গ্রামের বনদপ্তরও দুটি ব্লকের সীমানা এলাকায় চব্বিশ ঘণ্টা মনিটরিং চালাচ্ছে।
২০১৮ সালের আতঙ্ক যাতে ফিরে না আসে সেই জন্য জঙ্গলগুলিতে বিশেষ নজরদারি রাখছে। বিভিন্ন গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বছর ছয়েক আগে লালগড়, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার বিভিন্ন গ্রামে দুমাস ধরে ছিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আতঙ্ক। সেই সময় বহু গবাদি পশু মারা পড়েছিল বাঘের আক্রমণে। মানুষও আহত হয়েছিল। সেই আতঙ্ক ফিরিয়ে দিয়েছে জিনাত এই শীতে। তার হামলার ভয়ে সন্ধ্যা তো বটেই, দিন দুপুরেও অনেকে বের হচ্ছেন না। ২৪ নভেম্বর জিনাত নামে ওই পূর্ণবয়স্ক বাঘিনীটি ওড়িশার সিমলিপাল রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে চলে আসে। গলায় রেডিও কলার পরানো থাকায় বাঘিনীটির উপর নজরদারি রাখা গিয়েছে। সেখান থেকে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের চাকুলিয়া রেঞ্জের অধীন জঙ্গলে চলে আসে। বাঘিনীটিকে ট্রাঙ্কুলাইজ করার চেষ্টা চলছে। ঝাড়গ্রাম জেলা বনদপ্তর ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.