সৌরভ মাজি, বর্ধমান: নির্মাণপর্বেও ছিল টানাপোড়েন। উদ্বোধনের সময়েও কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন অব্যাহত। বর্ধমানের ঝুলন্ত রেল উড়ালপুলের উদ্বোধন নিয়েও উসকে উঠল বিতর্ক। আজ নবনির্মিত রেল উড়ালপুলটি উদ্বোধন করবেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সোমবার তেমনই জানিয়েছেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তবে এই উড়ালপুলটি উদ্বোধনের কোনও খবর রেলের কাছেই নেই বলে দাবি আধিকারিকদের।
পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক অমিতাভ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মোবাইলে সোমবার রাতে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “এই বিষয়ে কোনও খবর আমাদের কাছে নেই। তবে ৩০ সেপ্টেম্বর রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বর্ধমানের রেল ওই উড়ালপুলের উদ্বোধন করছেন।” রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ওই দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তবে এবারও এই ঘটনা ঘটলে, ফের একবার কোনও যৌথ প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে আলাদা আলাদা করে উদ্বোধনের সেই ট্র্যাডিশন বজায় থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এর আগে পানাগড় বাইপাসের উদ্বোধন আলাদাভাবে দু দিন হয়েছিল। একবার রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ফিতে কেটে গিয়েছিলেন। আর একবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র হাত ধরে উদ্বোধন করা হয়। আসানসোলেও বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনেও দেখা গিয়েছে, কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্ব। একই প্রকল্প একাধিকবার উদ্বোধন করা হচ্ছে। রাজ্যের অন্যত্রও রয়েছে এমন উদাহরণ।
সোমবার রাতে বর্ধমানের স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় উদ্বোধনস্থল ঠিক করতে পরিদর্শনে যান পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু-সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরা। রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প স্বপন দেবনাথ বলেন, “মঙ্গলবারই উদ্বোধন হবে। পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস আমাদের জানিয়েছেন যে তিনি আসতে পারছেন না। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় উদ্বোধনে আসছেন।”
এদিকে পঞ্চায়েত মন্ত্রীর উদ্বোধনের দিনই সকালে ফের উড়ালপুলের স্বাস্থ্যপরীক্ষা নিয়ে নয়া নির্দেশিকা জারি করল নির্মাণকারী সংস্থা। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, উড়ালপুলের ৬টি জায়গায় সিঁড়ি বসাতে হবে, ভারবহন ক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। মনে করা হচ্ছে, রাজ্যের তরফে উদ্বোধন আটকাতেই তাদের এই নতুন নির্দেশিকা।
রেলের উড়ালপুলগুলিকে বর্ধমান শহরের লাইফলাইন বলা চলে। পুরনো রেল উড়ালপুল বিপজ্জনক হওয়ায় কয়েকদিন আগেই তাতে যান চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ফলে কালনা-কাটোয়ার দিকে যান চলাচলের ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এদিকে, কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে কয়েক বছর আগে নতুন ঝুলন্ত রেল উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হয়। সেই কাজও সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এই নতুন উড়ালপুল চালু হলে সাধারণ মানুষের হয়রানি কমবে।
জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানান, এই প্রকল্প যৌথভাবে হলেও রাজ্য সরকার অর্ধেকেরও বেশি অর্থ দিয়েছে। রাজ্য সরকারের দেওয়া অর্থের পরিমাণ ১৬৭ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার দিয়েছে ১২০ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। নতুন উড়ালপুলগুলি দ্রুত চালু করা নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের তরফে রেলমন্ত্রকে কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়। সেখান থেকে সবুজ সংকেত মেলার পরই রাজ্য সরকারের তরফে নয়া উড়াল উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত হয়। জেলাশাসক আরও জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুরে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় উড়ালপুলের উদ্বোধন করবেন। তার জন্য সবরকম প্রস্তুতি তাঁরা নিয়ে রেখেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.