নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: পৃথক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের পর এবার পৃথক মহাভোজ৷ পরপর দু’টি অনুষ্ঠানে দ্বিধাবিভক্ত ঠাকুর পরিবার৷ শ্রীধাম ময়দানে মহাভোজের আয়োজন করেছেন মমতাবালা ঠাকুর৷ ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতানেত্রীরা৷ কামনা সাগরের পাড়ের মাঠে মহাভোজ উপলক্ষে শান্তনু ঠাকুরের পৃথক অনুষ্ঠানে হাজির কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব৷
দীর্ঘদিন রোগভোগের পর গত ৫ মার্চ এসএসকেএমে মারা যান মতুয়া মহাসংঘের প্রধান বীণাপাণি দেবী৷ তাঁর মৃত্যুর পর থেকে চলছে ঠাকুর পরিবারে তরজা৷ প্রকাশ্যে চলে এসেছে প্রয়াত বড়মার বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণের স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর এবং তাঁর নাতি শান্তনু ঠাকুরের দ্বন্দ্ব৷ কবে সৎকার করা হবে বড়মার এবং কীভাবে সৎকার করা হবে তাঁকে, তা নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি৷ মমতাবালা ৬ মার্চ শেষকৃত্যে রাজি থাকলেও, শান্তনু ঠাকুরের দাবি মেনে তার পরেরদিন দাহ করা হয় বীণাপাণি দেবীর৷ কিন্তু তারপরেও দ্বন্দ্বে ইতি পড়েনি৷ বরং আরও জোরালো হয়েছে মতপার্থক্য৷ বড়মার মৃত্যুর পর মতুয়া মহাসংঘের প্রধান হিসাবে কে দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়েও অশান্তি চলছে৷ যদিও মহাসংঘের নিয়মানুযায়ী, একদিন কোনও পদ ফাঁকা রাখা যায় না৷ তাই মহাসংঘের তরফে বৈঠকের পর আপাতত সংঘ প্রধানের গুরুদায়িত্ব বড়মার পুত্রবধূ মমতাবালা ঠাকুরের কাঁধেই তুলে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু মহাসংঘের সিদ্ধান্তে আপত্তি রয়েছে শান্তনুর৷ তাঁর দাবি, মমতাবালা ঠাকুর তাঁর জেঠু কপিলকৃষ্ণের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী৷ হিন্দু ধর্মমতে কোনও ব্যক্তির দ্বিতীয়বার বিয়ে বৈধ নয়৷ তাই দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে তিনি মানেন না৷ পরিবর্তে তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রীকেই মতুয়া মহাসংঘের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে সরব বড়মার নাতি৷ যদিও এক্ষেত্রে শান্তনুর দাবি নিয়ে এখনও সেভাবে আলোচনা হয়নি৷ পরবর্তীকালে ভোটাভুটির মাধ্যমে বেছে নেওয়া হবে মতুয়া মহাসংঘের স্থায়ী প্রধানকে৷
ক্ষমতার পাশাপাশি পারলৌকিক ক্রিয়া নিয়েও মতভেদের অন্ত নেই৷ শুক্রবার নিজের বাড়িতে বড়মার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করেন তাঁর ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। অন্যদিকে, নাট মন্দিরে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সারেন বীণাপাণি দেবীর পুত্রবধূ মমতাবালা ঠাকুর। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের পর মহাভোজেও সেই একই মতবিভেদের ছায়া৷
রবিবার মমতাবালা ঠাকুর শ্রীধাম ময়দানে মহাভোজের আয়োজন করেছেন৷ দেশ-বিদেশ থেকে আসা মতুয়া ভক্তদের জন্য নিরামিষ খাবারের বন্দোবস্ত করেছেন তিনি৷ এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বড়মাকে শ্রদ্ধা জানান জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷ পারিবারিক তরজাতে কার্যত বিরক্ত তিনি৷ বলেন, ‘‘মা কারও একার নয়, সবার মা৷ কেউ যদি ভাবে ঠাকুরবাড়ির দখল নেবে, তা হবে না৷ ঠাকুরবাড়ি মতুয়া সদস্যদের সম্পত্তি৷ রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ যেমন কারও একার নয়৷ তেমনই ঠাকুরবাড়ি, বড়মাও কারও একার নয়৷’’
এদিকে, কামনা সাগরের পাড়ের মাঠেও একটি পৃথক মহাভোজের আয়োজন করেছেন বড়মার নাতি শান্তনু ঠাকুর৷ তাঁর ওই অনুষ্ঠানে কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় স্তরের বিজেপি নেতারা উপস্থিত হয়েছেন৷
ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশের ভক্তরাও মহাভোজের অনুষ্ঠানে শামিল হয়েছেন৷ তবে কারা কোন পক্ষের অনুষ্ঠানে যান সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন সকলেই৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.