অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: সবেমাত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে। তখনই শ্রেণিকক্ষের ছাদের ভাঙা অংশ থেকে একটি চাঙড় খসে পড়ে। আর তাতেই জখম হয়েছে দুজন পড়ুয়া। জখম দুজনই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে খড়গপুর শহরের ইন্দা এলাকায় ইন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
জখম দুই পড়ুয়ার নাম তানিয়া রাঠোর ও সুমন কিশোর পাঁজা। এরা দুজনেই তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। এইদিন তৃতীয় শ্রেণির বাংলা পরীক্ষা ছিল। ঘটনার পরেই দ্রুত বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সহ আরও দুজন সহ শিক্ষক ও শিক্ষিকা জখম দুই পড়ুয়াকে নিয়ে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। জানা গিয়েছে, দুজনকেই প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে একজনের মাথার সিটি স্ক্যান করতে হয়েছে।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে জখম দুই পড়ুয়ার অভিভাবক বিদ্যালয়ে পৌঁছে যান। বিদ্যালয় ভবনের বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সোনিয়া পাঁজা নামে এক অভিভাবক বললেন “খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে ছুটে যাই। গিয়ে জানতে পারি ছেলের মাথায় চোট লেগেছে।” তারপরেই রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন,”বিদ্যালয়ের এই বেহাল দশা অনেক বছর ধরে চলছে। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই পাশের নালার নোংরা জল ঢুকে যায়। জানলা ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। ছাদ একধার থেকে ভেঙে গিয়েছে। আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কারও কোনও হুঁশ ফেরেনি।” অভিযোগ অস্বীকার করেননি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষিকারা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক তৃপ্তিনাথ আচার্য ও শিক্ষিকা স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় মিশ্র বললেন, “আজ থেকে বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় পার্বিক মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। এইদিন বাংলা পরীক্ষা ছিল। তৃতীয় শ্রেণির কক্ষে সবে প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে। তারপরেই উপর থেকে একটি চাঙর খসে পড়ে। দুজন তৃতীয় শ্রেণির বাচ্চা জখম হয়েছে।” তাঁদের অভিযোগ, “অনেকদিন ধরে বিদ্যালয় ভবন বেহাল দশায় রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রশাসনের সব জায়গায় আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।”
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে খড়গপুর মহকুমা শাসক দিলীপ মিশ্র খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে যান। জখম পড়ুয়াদের দেখেন। চিকিৎসক-সহ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক-সহ অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বললেন, “অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে বলা হয়েছে অবিলম্বে ঘটনার বিস্তারিত কারন জানিয়ে একটি রিপোর্ট দিতে। রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” এই ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবতোষ মান্না বললেন,”গত ২০১৬ সাল থেকে বিদ্যালয় ভবনের এই বেহাল দশা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে দুবার এধরনের ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যালয় শিক্ষাদপ্তর থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বত্র লাগাতারভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ কিছু হয়নি।” এদিকে এই ঘটনার পর অভিভাবক-সহ স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.