Advertisement
Advertisement

‘ওই যে বাবা ঘুমাচ্ছে’, বারাসতে ফিরল রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ডের ছায়া

বৃদ্ধ বাবাকে খুন করে তাঁর পচাগলা দেহের সঙ্গে বসবাস করছিল ছেলে।

Robinson Street rerun in Barasat
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:January 25, 2019 9:42 am
  • Updated:January 25, 2019 9:42 am  

ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: বাড়ির আশপাশে দুর্গন্ধে কেউ টিকতে পারছে না। ওই বাড়ির বৃদ্ধ মানুষটিকে গত চারদিন দেখতে পাননি প্রতিবেশীরা। সন্দেহ হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করেন। ছেলে বেরিয়ে এসে জানায়, “বাবা ঘুমাচ্ছে।” ছেলের সারা শরীরেও সেই অদ্ভুত পচা গন্ধ।

রবিনসন স্ট্রিটের পার্থ, বেহালার শুভব্রতর কাণ্ডকারখানা মানুষ ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছে। তাই এদিন বারাসতের রথতলার বাসিন্দা জীবন কুমার চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ আর ছেলে সৌগতর অস্বাভাবিক আচরণ দেখে পড়শিরা দেরি না করে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ আসতেই যা দেখা গেল, তা রবিনসন স্ট্রিট বা বেহালার ঘটনার মতোই রোমহর্ষক, গায়ে কাঁটা দেওয়া। বৃদ্ধ বাবাকে খুন করে চারদিন ধরে তাঁর পচাগলা দেহের সঙ্গে বসবাস করছিল ছেলে। এদিন রথতলার ব্যাংক কলোনিতে দোতলা বাড়ির ঘর থেকে উদ্ধার হল অশীতিপর জীবনবাবুর পচাগলা দেহ। মাথার পিছনে আঘাতের চিহ্ন। অভিযুক্ত ছেলে সৌগত মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানিয়েছেন পড়শিরা। তাকে আটক করে হাসপাতালে মনোরোগ বিভাগে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

[দেশের সুরক্ষায় প্রাণত্যাগ, মরণোত্তর অশোক চক্র সম্মান পাচ্ছেন প্রাক্তন জঙ্গি]

পড়শিরা জানিয়েছেন, রবিবার বিকেলে শেষবার জীবনবাবুকে দেখা গিয়েছিল, পাড়ার গলি দিয়ে হাঁটছিলেন। তার পর আর দেখা মেলেনি। পড়শিদের দাবি, অন্যান্য দিনে জীবনবাবুর ছেলের চিৎকার শোনা যেত। প্রায় রোজই বাবাকে মারধর করত। অসহায় বাবার আর্তনাদ আর ছেলের উন্মাদের মতো চিৎকারে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন আশপাশের মানুষ। কিন্তু সোমবার থেকে তেমন কিছু কানে আসেনি তাঁদের। স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, বছর আটেক আগে জীবনবাবুর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। ছোটছেলে কর্মসূত্রে চেন্নাইয়ে থাকেন। ব্যাংক কলোনির ওই বাড়ির দোতলায় বড় ছেলে সৌগতর সঙ্গেই থাকতেন বোকারো স্টিল প্ল্যান্টের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক জীবনবাবু। একতলায় ভাড়াটে ছিল। কিন্তু কয়েক মাস আগে তাঁরাও চলে যান। ওই এলাকার বাসিন্দা চৈতালি দাস জানিয়েছেন, “জীবনবাবুর বড় ছেলের মানসিক অবস্থা ঠিক ছিল না। পাড়ার লোকেদের অকারণে গালিগালাজ করত। অশ্রাব্য এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা বলত। বৃদ্ধ বাবাকে মারধর করত, খেতে দিত না। পাড়ার কেউ তাঁকে বোঝাতে গেলেও শুনত না। তিন মাস আগে থেকে কাজের লোককেও বাড়িতে ঢুকতে দিত না সে।”

এদিন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বারাসতের পদস্থ পুলিশ আধিকারিকরা। প্রাথমিকভাবে জীবনবাবুর দেহটি দেখে তাঁদের অনুমান, ভারী অথবা ধারালো কোনও জিনিস দিয়ে ওই বৃদ্ধের মাথার পিছনে আঘাত করা হয়েছে। বারাসতের এসডিপিও দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “গোটা ঘরে রক্তের দাগ ছিল। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পরই মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতভাবে বলা যাবে।” পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জীবনবাবুর দেহ উদ্ধার হওয়ার পর তাঁর ছেলে সৌগতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সৌগতর দেহেও তার বাবার মৃতদেহের মতো পচা গন্ধ ছিল। পুলিশের অনুমান, বাবার পচাগলা দেহের সঙ্গেই চারদিন ধরে ছিল সে। বাবার মৃত্যু সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সৌগত বলে, “বাবা তিন-চারদিন ধরে ঘুমাচ্ছে। জল আর বিস্কুট দিয়েছিলাম, খেয়েছে।” তার মানসিক অবস্থা বোঝার জন্য আরও বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করে পুলিশ। তার উত্তর সঠিকভাবেই দেয় সে। এমনকী ঝরঝরে ইংরেজিতেও পুলিশের সঙ্গে বাক্য বিনিময় করে অভিযুক্ত। তাই সৌগত সত্যি মানসিক ভারসাম্যহীন কি না তা জানার জন্য তাকে বারাসত হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকদের রিপোর্ট পাওয়ার পরই সৌগতর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

[সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে হামলার ছক, গ্রেপ্তার দুই জঙ্গি]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement