দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: চূড়ান্ত উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে হুগলির গুপ্তিপাড়ায় জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ির ভাণ্ডার লুট৷ জগন্নাথের মাসির বাড়ি গুচিন্ডা বাড়ি থেকে ৩০ রকমের পদ-সহ প্রায় ৪০০টি মালসা এদিন লুট করে নিয়ে যায় প্রায় শ-দেড়েক ‘লুটেরা’৷ না! বাস্তবে এটা কোনও ডাকাতির ঘটনা নয়৷ বহু বছর ধরে গুপ্তিপাড়ায় উলটো রথের আগের দিন এই ভাণ্ডার লুট নামে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলে আসছে৷ আর এই ভাণ্ডার লুট দেখতে বহু দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন গুপ্তিপাড়ায়৷
কথিত আছে, রথযাত্রার দিন জগন্নাথদেব মাসির বাড়িতে এসে ভালমন্দ খাবার খাওয়ার পর তার আর বাড়ি ফিরে যেতে মন চায় না। ভাল ভাল খাবার খেয়ে রীতিমতো আয়েস করে দিন কাটাতে থাকেন জগন্নাথ। বাধ্য হয়ে স্বয়ং লক্ষ্মী নিজে এসে সরষে পোড়া দেন৷ কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয় না। শেষপর্যন্ত লক্ষ্মী গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবন চন্দ্র জিউ এস্টেটের রাজা বৃন্দাবন চন্দ্র জিউ (কৃষ্ণেরই আর এক নাম)-এর দ্বারস্থ হন৷ রাজা দেখলেন, খাবারের লোভে জগন্নাথ এখানে পড়ে আছেন৷ সেই খাবারের ভাণ্ডার লুট করলেই তিনি আর এখানে থাকবেন না। তাই লেঠেলদের ডেকে ঘোষণা করেন, যাঁরা ভাণ্ডার লুট করেন, যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবে, তাঁদের লেঠেল হিসেবে নিয়োগ করা হবে।
রাজার এই ঘোষণার পরই লেঠেলরা গায়ে রীতিমতো তেল মেখে উলটো রথের আগের দিন মাসির বাড়ির মন্দিরের তিনটে দরজা পুরোপুরি ঘিরে রাখে। মন্দিরের ভিতর ৪০০ মালসায় রাখা ছিল পায়েস, খিচুড়ি, মালপোয়া, সন্দেশ-সহ ৩০ রকমের লোভনিয় পদ৷ মন্দিরের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে লেঠেলরা আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমস্ত মালসা লুঠ করে নিয়ে যায়৷ জগন্নাথদেব এরপর বুঝতে পারেন, যে খাবারের জন্য তিনি এতদিন এখানে পড়ে ছিলেন, সেই খাবার আর পাওয়ার আশা নেই৷ তাই মনে মনে হতাশ হয়ে ভাণ্ডার লুটের পরের দিন জগন্নাথ বিষণ্ণ মনে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.