সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: আবার গতির বলি হলেন পাঁচ যুবক। মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা থেকে দিঘাগামী একটি ইনোভা গাড়ি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি এলপিজি ট্যাঙ্কারের পিছনে ধাক্কা মারায় ঘটনাস্থলেই গাড়িটির চালক-সহ চারজনের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গাড়ির অপর দুই আরোহীকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে আরও একজনের মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঘটেছে বাগনান থানার তামুনতলায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ও আহত সকলেরই বয়স ৩০ এর মধ্যে। মৃত ৫ জন হল রাহুল আলি, মুজাফফর আলি, তারিকুল আলি, চাঁদ মহম্মদ, শেখ ইমতিয়াজ (গাড়ির চালক)। আহতের নাম বক্তিয়ার আলি। এদের মধ্যে গাড়ির চালক ছাড়া বাকি পাঁচজন অসমের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। এরা মঙ্গলবার সকালে কলকাতার ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকা থেকে গাড়িটি ভাড়া করে দিঘার উদ্দেশ্যে রওনা দেন বলে জানা গিয়েছে। এদিন দুপুর নাগাদ তাঁদের গাড়িটি বাগনান থানার দেউলটির কাছে তামুনতলায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি গ্যাস ট্যাঙ্কারের পিছনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রচন্ড গতিতে ধাক্কা মারে। গাড়ির গতি এতটাই বেশি ছিল যে নিমেষের মধ্যে গাড়ির চার ভাগের তিন ভাগ অংশ ট্যাঙ্কারের নিচে ঢুকে যায়। এবং গাড়ির সামনে থেকে তিন ভাগ অংশ পুরোটাই ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। যার ফলে গাড়িটির চারজন আরোহীর দেহ তালগোল পাকিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বিকট আওয়াজ শুনে ছুটে এসে উদ্ধার কাজে হাত লাগান।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বাগনান থানার পুলিশ। মৃতদেহগুলি এতটাই বীভৎস আকার ধারণ করে যে উদ্ধার করতে গিয়ে শিউরে ওঠেন আশপাশের লোকজন। তাঁরা কোনওভাবে জীবিত দুই যাত্রীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাড়িটি অত্যন্ত বেগে চলছিল, হঠাৎই গাড়িটি একবার বাম দিকে একবার ডান দিকে টাল খেতে খেতে সজোরে ট্যাঙ্কারের পিছনে ধাক্কা মারে। পুলিশের অনুমান গাড়ির মধ্যে চালক ও অন্য যাত্রীরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন, এক মৃত যাত্রীর কানে হেডফোন লাগানো ছিল বলে জানা গিয়েছে। তাঁরা নিজেদের মধ্যে গল্প, হাসি, ঠাট্টায় মশগুল থাকার কারণে গাড়ির চালক সম্ভবত অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন। আর তাই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এলপিজি ট্যাঙ্কারটিকে চালক প্রথমে ঠিকমতো বুঝতে পারেননি। সেই কারণেই ট্যাঙ্কারটি যখন চালকের নজরে আসে তখন তাঁর আর কিছুই করার ছিল না।
পুলিশ জানায়, রাস্তায় গাড়িটির স্পিড মার্ক দেখে মনে হয়েছে গাড়িটি অন্ততপক্ষে ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে চলছিল। আর এই গতির কারণেই গাড়ির চালক শেষ মুহূর্তে গাড়িটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন, যার ফলে ঘটে গিয়েছে এত বড় ভয়ংকর এক দুর্ঘটনা। অত্যধিক গতিতে গাড়ি না চালানোর জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বারে-বারে চালকদের সতর্ক করা সত্ত্বেও চালকরা সতর্ক হননি। যার ফলে একের পর এক এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। আর সেই ঘটনায় অকালে ঝরে পড়ছে অমূল্য প্রাণ। তাই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছ আর কবে গাড়ি চালকরা সচেতন হবেন?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.