সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তোবড়ানো বাইক। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া শরীর। রাস্তায় পড়ে চাপ চাপ রক্ত। পড়ে থাকা নিথর দেহ। এমন ছবি ক্রমশ আবছা হচ্ছে শহরে – অন্তত সমীক্ষা তো তাই বলছে। সচেতনতায় গত এক বছরে রাজ্যে মৃত্য কমেছে প্রায় এক হাজার। আর দুর্ঘটনা, সেটা প্রায় তিন হাজার। কারণ হল মাথার হেলমেট নিয়ে কড়াকড়ি আর জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি। পুলিশ এবং রাজ্য পরিবহণ দফতরের এমন জোড়া পদক্ষেপে একবছরেই কমল রাজ্যজুড়ে চলা দুর্ঘটনার ব্যাধি। মৃত্যর হারও কমল অনেকটাই। সঙ্গে জখমের সংখ্যাও। তবে এখনই তথ্য নিয়ে ভাবতে নারাজ রাজ্য সরকার। দুর্ঘটনা রোধে তাই আরও কঠোর পদক্ষেপের কথা জানাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক কর্তা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পথ সুরক্ষায় চালু করেছিলেন সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচি। রাজ্যজুড়ে চলেছে তার প্রচার। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বেপরোয়া গতির গাড়ির ধরপাকড়ও দিনদিন বাড়ছে। সঙ্গে মোটা টাকা জরিমানার ভয়। আর তাতেই মিলেছে ফল। শুধু রাজ্য নয়। মহানগরেও দুর্ঘটনার হার গত দুবছরের তুলনায় অনেকটাই কম ২০১৭তে। যেটা ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের’ সাফল্য বলেই মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। শুধু তাই নয়, নবান্নের এক কর্তার কথায়, রাজ্যে যেভাবে দুর্ঘটনার হার কমেছে, তা দিল্লিতেও প্রশংসিত। সুপ্রিম কোর্ট পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে মিটিং ডাকে সেখানে এই রাজ্যের প্রশংসা করা হয়েছে কয়েকদিন আগে।
কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশের তরফে প্রতি ক্যালেন্ডার বছর হিসাব করে দুর্ঘটনার মাপ করা হয় – জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর। সেই রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ তে রাজ্যে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্য কমেছে ৯৯১ জনের। কলকাতায় ১৫৯ জনের। রাজ্যে পথ দুর্ঘটনা ২০১৬র তুলনায় ২০১৭ তে কমেছে ২৮৫৩টি, কলকাতায় ১০২৯টি। জখমের সংখ্যা কমেছে রাজ্যে ১৮৮৯ জনের, কলকাতায় ৬৪৫ জনের। তবে সবকিছু কমলেও রাস্তায় বেড়েছে কেসের সংখ্যা। কারণ প্রযুক্তি। কলকাতা পুলিশের কর্তারা জানাচ্ছেন, যে রাস্তায় গাড়ির গতি ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার হওয়ার কথা, সেখানে গতি ৫০ কিলোমিটার উঠলেই খবর চলে যাচ্ছে কন্ট্রোলে। সেখান থেকে বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে সরাসরি গাড়ির মালিকদের কাছে। ফলে আগের তুলনায় প্রচুর বাড়ছে কেসের সংখ্যা। করা হচ্ছে মোটা জরিমানা। সাধারণ মানুষও একটু হলেও আগের থেকে সচেতন হয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন।
বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি এড়াতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাথায় হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করেছেন। তা না হলেই মোটা টাকা জরিমানা করছে পুলিশ। তাই বাধ্য হয়েই বাইক আরোহীদের মাথায় হেলমেট চড়াতে হচ্ছে। যার ফলও মিলছে। বাইক দুর্ঘটনা হলেও এড়ানো যাচ্ছে প্রাণহানি। জানাচ্ছেন কলকাতা পুলিশের এক কর্তা। তবে সব যে এড়ানো যাচ্ছে তা নয়। কারণ ব্যতিক্রমও আছে। অনেকেই এখনও মাথায় হেলমেট না পরেই গাড়ি চালান। বিশেষত জেলায়। ফলে কলকাতায় মৃত্যর হার যতটা কমছে জেলাতে ততটা নয়। তাই জেলাতেও এবার দুর্ঘটনা কমাতে আরও কড়াকড়ি করা হবে।
কলকাতা পুলিশের ডিসি ট্রাফিক সুমিত কুমার বলেন, “গত এক বছরের তুলনায় কলকাতায় ২০১৭ সালে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং তাতে মৃত্যর সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। প্রায় ২২-২৩ শতাংশ। আমরা আরও একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছি যাত্রী সচেতনতার জন্য। আশা করছি আরও দুর্ঘটনা কমানো যাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। গাড়ির গতি নির্দিষ্ট পরিমাণের তুলনায় বাড়লেই এখন তা সরাসরি পুলিশ জেনে যাচ্ছে। যিনি গাড়ি চালাচ্ছেন, তাঁর কাছেও মেসেজ চলে যাচ্ছে। ফলে তিনি সতর্ক হয়ে যাচ্ছেন। আর এতে কাজও হচ্ছে। বেশি জোরে গাড়ি চালানোর প্রবণতা কমছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.