সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কি এক নয়া অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে? তৃণমূলে কার্যত একা হয়ে যাওয়া মুকুল রায়ের নতুন দলে কি যোগ দিচ্ছেন সদ্য দল থেকে বহিষ্কৃত সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ কিন্তু এমনটাই মনে করছেন। তাঁদের মতে, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এ রাজ্যে মরণকামড় বসাতে মরিয়া বিজেপি। তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কই এখন বিজেপির আসল টার্গেট। আর সেই লক্ষ্যেই মুকুল রায় ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজেদের দিকে টেনে আনতে চায় রাজ্য বিজেপি। এখনই সরাসরি বিজেপিতে যোগ না দিলেও মুকুল রায়ের নতুন দলকে সবরকমভাবে সমর্থন দিতে পারে বিজেপি। আর মুকুল রায়ের নেতৃত্বে সেই দলেরই ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ হতে পারেন বহিষ্কৃত সিপিএমের ‘তরুণ তুর্কি’ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বও এই বিষয়ে জল্পনা উসকে দিয়েছে। বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ সরাসরিই বলছেন, ‘দেখুন না শুধু, ক’জন তৃণমূল নেতা বিজেপিতে আসেন। আমি কারও নাম করতে চাই না কিন্তু তৃণমূল ভবন এবার খালি হয়ে যাবে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে নতুন দল গড়তে চান মুকুল। তার আগে পঞ্চায়েত ভোট তাঁর কাছে অগ্নিপরীক্ষার মতো। এমনিতেই তৃণমূলে এখন কার্যত কোনও পদ নেই মুকুলের। সহ-সভাপতির মতো সর্বভারতীয় পদ থেকে সুকৌশলে তাঁকে ছেঁটে ফেলেছে দল। মুকুলের অন্যত্র যাওয়া এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ২০১৫-তে সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ তাঁকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া ইস্তক অখুশি ছিলেন মুকুল। সেই সময় ‘ন্যাশনালিস্ট তৃণমূল কংগ্রেস’ বা ‘এনটিসি‘ তৈরি করেন মুকুল। যদিও ২০১৬-তে তৃণমূলে ‘কামব্যাক’ করেন মুকুল। এবার বঙ্গ সিপিএম ও তৃণমূলকে টক্কর দিতে ওই দলকেই আঁকড়ে ধরে ফের রাজ্য রাজনীতিতে গুরুত্ব ফিরে পেতে চাইছেন মুকুল, জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। মুকুল রায় নতুন দল গড়লে তার পিছনে যে বিজেপির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সবরকম মদতই থাকবে, সেটাও মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মুকুল রায়ের দলে যোগ দেওয়ার জল্পনা নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি ঋতব্রত। তাঁর কথা, আমি একজন নির্দল সাংসদ। আপাতত কোথাও যাচ্ছি না। কেউ কেউ রটাচ্ছেন আমি নাকি তৃণমূল বা বিজেপিতে যাচ্ছি। এগুলো আসলে সিপিএমেরই ছড়ানো অপপ্রচার। আমার ভাবমূর্তিকে কলুষিত করা হচ্ছে এসব ভুলভাল প্রচার করে।’ তাঁর বক্তব্য, ‘আমি ২১ বছর ধরে সিপিএম করছি। এখন যদি বামেরা ভাবেন আমার মতো ক্যাডারের দরকার নেই, তাহলে তাই-ই হবে হয়তো।’ সম্প্রতি দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে সিপিএম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে ঋতব্রতকে। নারীঘটিত কেচ্ছা ও বিলাসবহুল জীবনযাপন করে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের রোষানলে পড়েন ঋতব্রত। যদিও তাঁর দাবি, সিপিএমের আরও বেশ কয়েকজন নেতাও বিলাসবহুল জীবন কাটান। বেছে বেছে তাঁকেই টার্গেট করা হল কারণ তিনি বঙ্গ সিপিএমের অন্দরের দ্বিখন্ডিত চিত্রটা প্রকাশ্যে তুলে এনেছেন। এতসব নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাতে রাজি নয় রাজ্য বিজেপি। পুরসভা ভোটে তৃণমূলকে বেগ দেওয়া বিজেপি এখন নম্বর গেমের দিকে ঝুঁকেছে। দু’জন সাংসদকে দলে টেনে আনতে পারলে যে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট ও লোকসভা ভোট আখেরে লাভই হবে, সে কথা কোনও রাখঢাক ছাড়াই জানাচ্ছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.