শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: চাকরি নিয়ে ছেলে গিয়েছিল কলকাতায়। পরিবারকে ভাল রাখার আশায় বুক বাঁধছিল বছর তেইশের ঋষভ মণ্ডল। কলকাতাই তাঁর স্বপ্ননগরী। শেষপর্যন্ত সেই মায়াবী শহরই কাড়ল তাঁর প্রাণ। রাজভবনের সামনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বেঘোরে মৃত্যু হল তাঁর। ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা। কোনওরকমে কান্না গিলে পরিবারকে সামলানোর চেষ্টা করছেন ঋষভের বাবা মন্টু মণ্ডল।
মঙ্গলবার বিকেলে অফিস থেকে বেরনোর সময় ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল মন্টুবাবুর। দুপুর কী খেয়েছিল তা নিয়ে কথা হয়। মন্টুবাবুর কথায়, “ঋষভ বলেছিল, প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। গাড়ি করে বাড়ি যাব। আমরা বারবার বলছিলাম, সাবধানে যাস। ওটাই শেষ কথা।” বেসরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার ঋষভের আর বাড়ি ফেরা হল না।
মঙ্গলবার বিকেলে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে বারবার রাজভবনের সামনের ছবি দেখানো হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, মুষলধারে বৃষ্টির পর জলমগ্ন কলকাতা। আর সেই মহানগরে ঘটে গিয়েছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। পুলিশ আসার আগে পর্যন্ত জলের মধ্যেই পড়েছিল তাঁর দেহ। সেই ছবি দেখেই ঋষভের প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। তাঁরা মন্টুবাবুকে ছেলের বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকেন। এর মাঝেই ফরাক্কার পুলিশ ঋষভের পরিবারকে খবর দেয়। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা। তাঁকে সামলানো যাচ্ছে না। এদিকে ঋষভের জামাইবাবু ও খুড়তুতো ভাই কলকাতায় গিয়েছেন। হেয়ার স্ট্রিট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে দেহ নেবেন তাঁরা। আজ রাতেই ফরাক্কায় ফিরতে পারে ঋষভের দেহ।
এই অকাল মৃত্যুর জন্য কে দায়ী? উঠছে প্রশ্ন। প্রাথমিকভাবে পরিবারের অভিযোগ ছিল সরকারি গাফিলতির জেরেই ছেলের এই অবস্থা হল। কীভাবে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে থাকে রাস্তায়? CESC’র বিরুদ্ধে এফআইআর করার কথাও জানিয়েছিলেন তাঁরা। তবে বুধবার সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন। ছেলেকে হারিয়ে মন্টুবাবু বলছেন, “অভিযোগ করে কী হবে, ছেলেকে কি আর ফিরে পাব?” সত্যিই তো, গাফিলতি যাঁরই হোক সেই ত্রুটি তো শুধরে নেওয়া যাবে, ঋষভকে কি আর ফিরে পাবে তাঁর পরিবার?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.