চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বাড়ি ফেরার মরিয়া চেষ্টা রিকসাওয়ালার। তাঁরও বাড়িতে মাধবী আছে। আছে পরিবারের টান। কিন্তু পেটের জ্বালায় নিজের শহর, নিজের রাজ্য ছেড়ে তিনি এখন রিকসা চালান বারাণসীতে। লকডাউনে বাস, ট্রেন না পেয়ে নিজের রিক্সা নিয়েই বারাণসী থেকে হাওড়ার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছেন রিকসাওয়ালা কিশোর সাউ। বাবা বিশ্বনাথ মন্দিরের অলিগলি থেকে অসসি ঘাট, দশাশ্বমেধ ঘাট, মণিকরণ, হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তায় রাস্তায় পূণ্যার্থীদের নিয়ে যে ফুলছাপ ভ্যান রিক্সা ঘুরে বেড়াত, সেই তিনপায়া যানটি উঠে এল ৭ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে।
৪০ দিন কেটে গেলেও রিকসাচালক এখনও আটকে রাস্তায়। ডুবুডি চেকপোস্টে দেখা মিলল তাঁর। রিকসার প্যাডেলে পা দিয়েই প্রায় ৭০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে চান ওই রিকসাওয়ালা। বারাণসী থেকে সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার পেরিয়ে ডুবুডিতে এসে আটকে পড়েছেন কিশোর সাউ। আরও ২৫০ কিলোমিটার যেতে পারলেই পৌঁছে যাবেন হাওড়ার বালিতে। এক মাস কোয়ারেন্টাইনে আটকে থাকার পর বুধবার অনুমতি মিলল তাঁর বাড়ি ফেরার। ত্রাণে পাওয়া চাল, আলু, বাসন ও বিছানা নিয়েই বেরিয়ে পড়লেন রিক্সা চালক কিশোর। চড়া রোদেই দ্রুত প্যাডেলে পা চালালেন তিনি।
লকডাউনের পর ২৮ মার্চ বারাণসী থেকে নিজের রিকসাখানা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন রিকসাওয়ালা কিশোর। প্রায় এক সপ্তাহ রিকসা চালিয়ে ৩ এপ্রিল বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানা ডুবুডি চেকপোস্টে আটকে পড়েন তিনি। পুলিশ বাংলায় ঢুকতে না দিলে তিনি ঝাড়খণ্ডে ফিরে যান। মাইথন পুলিশ দেখতে পেয়ে রিলিফ ক্যাম্প বা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নিয়ে যায়। সেখানেই চলছিল থাকা খাওয়া। এরপর খবর পান পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিনরাজ্য থেকে ফেরাচ্ছে রাজ্য। সেই খবর পেয়ে বুধবার আবারও চেকপোস্টে আসেন তিনি। ফের পুলিশ আটকে দেয়। এবার অনুরোধ করেন তাঁকে যেতে দিতেই হবে। কোয়ারেন্টাইনে থাকার কাগজও দেখান। তারপরেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ছাড়া হয় কিশোর সাউকে।
কিশোর সাউয়ের ক্ষোভ, “অতদূর থেকে এসেও এক মাসের উপর পড়ে রইলাম বাংলা ঢোকার মুখে। ওদিকে আমার পরিবার উদ্বিগ্ন। না খাবার পেলাম, না পেলাম আশ্রয়। তবে দেরিতে হলেও নিজের বাড়ির ফেরার অনুমতি পেলাম। তাই রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.