প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে একের পর এক বিভিন্ন স্কুলে মিড-ডে মিলের বেহাল দশার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। কোথাও আবার দেখা গিয়েছে নিজেদের গাঁটের কড়ি খরচ করে খুদেদের পেটভরে খাওয়াচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। কী অবস্থা রাজ্যের বাকি স্কুলগুলির? চালচিত্র দেখতে পৌঁছে গেল সংবাদ প্রতিদিন.ইন।
সুমিত বিশ্বাস,পুরুলিয়া: কোনওদিন ভাত-আলু সেদ্ধ। কোনওদিন আবার সয়াবিনের ঝোল-ভাত। মিড–ডে মিলের এমন মেনুতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ফতোয়া দেওয়া হয়েছিল পঞ্চাশ গ্রাম হলুদ ও মিক্স মশালার প্যাকেটে চারদিন চল্লিশ জন পড়ুয়ার রান্না সারতে হবে। সেই সঙ্গে একশো গ্রাম সরষের তেলে চালাতে হবে দু’দিন। ফলে খুদে পড়ুয়ারা পেট ভরতি খাবার তো দূরের কথা, খাবার মুখেই তুলতে পারে না। পড়ুয়াদের মুখে মিড–ডে মিলের এমন হাল শুনে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে পুরুলিয়ার ঝালদা ১ নম্বর ব্লকের ইলু বয়েজ ও ইলু গার্লস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা দিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা।
সেদিনের পর স্কুলমুখো হয়নি পড়ুয়ারা। এরপর সোমবার স্থানীয় বাসিন্দা, অভিভাবক, প্রধান-উপপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক বৈঠক করে স্কুল খুলিয়ে ফের মিড-ডে মিল চালু করেন। কিন্তু দুই স্কুলই সয়াবিনের ‘ট্যালটেলে’ ঝোল থেকে বের হতে পারেনি। তবে ঝালদা তিন নম্বর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সিদ্ধার্থ মাহাতো বলেন, “এখন আর কোন সমস্যা নেই। আমাদের নিয়মিত নজরদারি চলবে।” ইলু বয়েজ ও গার্লস পাশাপাশি দুই প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইলু বয়েজের ছাত্র সংখ্যা ৪২। গার্লসের ৪১। দুই স্কুলেরই আলাদা হাড়ি চড়ে একেবারে পাশাপাশি। প্রায় প্রতিদিন কমপক্ষে দুটি স্কুলেই পঁয়ত্রিশ জন পড়ুয়ার জন্য রান্না হয়। স্থানীয় বাসিন্দা তথা পুরুলিয়া জেলা যুব তৃণমূলের সম্পাদক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখানে মিড-ডে মিলে আলু সেদ্ধ ভাত ও মাঝে মধ্যে সয়াবিনের ঝোল দেয়। তাছাড়া এক জন পডুয়ার জন্য একশো গ্রাম করে চাল বরাদ্দ থাকলেও পড়ুয়াদের পঞ্চাশ গ্রাম চালের ভাত দেওয়া হয়। সেই কারনেই আমরা স্কুলে তালা লাগিয়ে দিই।”
ইলু-জারগো গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অরূপ কুমার মণ্ডল বলেন, “এখানে মিড-ডে মিলে কোনওদিন ভাত-আলু সেদ্ধ, কোনওদিন আবার সয়াবিনের ঝোল-ভাত দেওয়া হয়। চল্লিশ জন পডুয়ার রান্নায় পঞ্চাশ গ্রাম হলুদ ও মশালার প্যাকেট চালাতে হবে চারদিন। রাঁধুনিদের এমন ফতোয়াই দিয়েছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।” তবে আলু সেদ্ধ ভাতের কথা স্বীকার করতে চায়নি দুই স্কুল কর্তৃপক্ষই। ইলু বয়েজ প্রাথমিকের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শেফালি মণ্ডল বলেন, “আলু সেদ্ধ ভাত সবদিন দেওয়া হয় না। এক ঘেঁয়ে সয়াবিন খেয়ে স্বাদ নষ্ট হলে তখন আলু সিদ্ধ করা হয়। সেই সময় ডালও থাকে।” অন্যদিকে, ইলু গার্লস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অনিল রজক বলেন, “বহুদিন আগে আলু সেদ্ধ ভাত দেওয়া হত। পরিদর্শক নিষেধ করার পর মিলে আর এখন আলু সেদ্ধ থাকে না।”
ছবি: সুনীতা সিং
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.