ফাইল ছবি।
অর্ণব দাস, বারাকপুর: মা-বাবার সম্মতিতেই, তাদের সামনেই সৎকারের সার্টিফিকেটে সই করেছিলাম। তদন্তে নির্যাতিতার সঠিক পথে বিচারের বদলে মোড় ঘোরানোর জন্যই আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। ফোনে একথা স্পষ্ট জানালেন সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। স্বপক্ষে তার বক্তব্য, “তরুণীর বাবা তাই এনিয়ে জানিয়েছিলেন, সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় আমাদের গাড়িতেই শ্মশানে গিয়েছিল। উনি আমার প্রতিবেশী, ভাইয়ের মতন। আমার মেয়েকে খুবই ভালোবাসতেন। যতটুকু কাগজ আমরা পেয়েছি, তারজনই।”
আর জি করে (RG Kar Incident) নিহত তরুণী চিকিৎসকের দাহ নিয়ে হওয়া বিতর্ক প্রসঙ্গে সব প্রশ্নেরই স্পষ্ট জবাব দিয়েছেন সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ঘটনার দিন মৃতার মা-বাবাই আমাকে প্রায় পৌনে বারোটা নাগাদ ফোন করে আর জি করে যেতে বলে। দুপুর দেড়টা নাগাদ আমি হাসপাতালে পৌঁছাই। সর্বক্ষণ আমি সন্তানহারা পিতামাতার সঙ্গেই ছিলাম। তাদের সঙ্গেই পুলিশের উপস্থিতিতে মৃতদেহ দেখি। মা বাবার গাড়িতেই ওদের বাড়িতে ফিরি।”
বাড়ি ফেরার পর থেকে পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা নিয়ে তার উত্তর, “ময়নাতদন্ত হতে হতে অনেক দেরি হয়েছে। তাই দেহ হাসপাতাল থেকে ছাড়তেও দেরি হয়েছিল। একইসঙ্গে তখন শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলির বিক্ষোভ। তখনও হাসপাতাল চালু ছিল। তাই যাতে কোন অশান্তি না হয়, এই সব ভেবেই হয়ত, পুলিশ একটু তাড়াতাড়ি দেহ নিয়ে বেরিয়েছে। তড়িঘড়ি কেউ করেনি। তাহলে তো বাড়িতে এতক্ষন দেহ থাকত না।” বাড়ি থেকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার সময়কার চিত্র তুলে ধরে তাঁর সংযোজন, “দেহ বাড়ি থেকে বের করার পর সাইরেন বাজিয়ে যেতে হয়। ওটাকে লোকে স্বাভাবিক ভাবেই তড়িঘড়ি বলবে। কিন্তু এটা তো করতেই হয়। রাস্তা খালি করেই তো মৃতদেহ নিয়ে যেতে হয়।”
শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পর একটি দাহ চলছিল বলেও জানান তিনি। বলেন, “যে দুটি মৃতদেহ ছিল, তাদের অত্যাধিক বয়স, একজন বোধহয় মহিলা। দুজনেই সোদপুরের বাসিন্দা। তাদের পরিবার দেখেছে একটা বাচ্চার মেয়ের সঙ্গে এই রকম হয়েছে। কারণ সংবাদমাধ্যমে ততক্ষণে খবরটি ছড়িয়ে পড়েছিল। তাছাড়াও সাধারণ ময়নাতদন্ত করা দেহ আগে সৎকার করা হয়। এর পরেই শ্মশানের দাহ সার্টিফিকেটে তার স্বাক্ষর প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, “মা-বাবার সঙ্গেই তাদের গাড়িতেই শ্মশানে যাই। যেহেতু কাগজপত্রের বিষয় রয়েছে। সকাল থেকেই কাগজপত্র যা করা হচ্ছিল আমার ব্যাগেই রাখা হচ্ছিল। আমাকেই তখন দাহ সার্টিফিকেটে সংবাদদাতার নাম দিতে বলে। তাই আমি গিয়ে সই করি, দাহ হওয়ার পর মা বাবার গাড়িতেই এসেছি। রাতে আমার কাছেই বাবা দাহ সার্টিফিকেট রাখতে বলেছিল। পরেরদিন সকালে বাড়িতে গিয়ে সেই শ্মশানে সার্টিফিকেট দিয়ে আসি।”
এর পরেই তার আক্ষেপ, “দুর্ভাগ্যোর বিষয় এটাকে বড় ইস্যু করেছে। মা বাবা তো আমার নামে কিছু বলেননি। একবারও বলেননি তাদের অমতে আমি কিছু করেছি। আসল উদ্দেশ্য হল, কে বা কারা খুন করল, কারা ছিল, তদন্তের সেই সঠিক জায়গায় না গিয়ে মোড় ঘোরাতে ঘুরে ফিরে কে শ্মশানে সই করে টাকা দিল তোলা হচ্ছে। এটা কি তদন্তের পার্ট? নাকি ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়? এই ঘটনায় তিনি মর্মাহত জানিয়ে সঞ্জীববাবুর দাবি, আমার মত পাড়ার লোকেরাও আহত। কারণ তারা সবটা জানে। আর এদিকে দূরে থেকে কলকাতার টেলিভিশনে বসে বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেহ না ছাড়ত, মা যদি সই না করত, তাহলে দেহ কিভাবে নিয়ে আসা হত?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.