জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র, নরম প্রকৃতি, বান্ধবীর সংখ্যা ছিল বেশি। উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ভালো ফলাফলের জোরে ডাক্তার হয়ে ওঠা। দুরন্ত কেরিয়ারগ্রাফ! স্কুলের সেই মেধাবী ছাত্রই এখন তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় জড়িত হয়ে সিবিআই-এর (CBI) নজরবন্দি। টানা তিনদিন ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই চলেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু স্কুলের মেধাবী ছাত্রকে যে এভাবে দেখতে হবে, ভাবতেই পারছেন না স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠীরা। তাঁরা রীতিমতো বিস্মিত। তবে আইনের উপর ভরসা রেখে সকলেই একমত যে, এমন নারকীয় ঘটনার সঙ্গে ডাঃ সন্দীপ ঘোষের কোনও যোগ প্রমাণিত হলে স্কুলে মেধাবী ছাত্রের নামফলক থেকে তাঁর নাম মুছে ফেলতে হবে।
বনগাঁ (Bongaon) হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন ডাঃ সন্দীপ ঘোষ। এই স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতেন তিনি। তার পর নবম-দশম অন্য স্কুলে পড়েন তিনি। একাদশে আবারও বনগাঁ হাই স্কুল। ১৯৮৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary)পাশ করেন পাড়ার ‘নোটন’ ওরফে ডাঃ সন্দীপ ঘোষ। নম্বর ছিল চোখধাঁধানো – ৮০ শতাংশ! সেসময় এই নম্বর খুবই কৃতিত্বের ব্যাপার। তাতেই গর্বিত হয়ে ওঠে গোটা স্কুল, পাড়া-প্রতিবেশী, সহপাঠীরা। তার পর জয়েন্ট এন্ট্রান্সে (JEE)ভালো ফল করে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ। শান্তশিষ্ট, মেধাবী, পরিশ্রমী, নরম স্বভাবের ছাত্রকে বেশ ভালোই বাসতেন শিক্ষকরা। সহপাঠীরাও জানত, সন্দীপ ভালো ছেলে।
কিন্তু সেসব জানা-চেনা নিমেষেই কি বদলে যাচ্ছে আর জি কর হাসপাতালের (RG Kar Hospital) ঘটনার পর? কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামে বনগাঁয় সন্দীপের তখনকার এক প্রতিবেশী বলছেন, ”নরম প্রকৃতির ছেলে ছিল আমাদের নোটন। বিশেষ বন্ধু ছিল না। তবে মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল। খুব মজা করত। সেদিনের নোটনকে নিয়ে আজ যা শুনছি, তাতে তো আমরা বিস্মিত। চাই, এই ঘটনার সত্যতা প্রকাশ্যে আসুক। তাহলেই আমরা নিশ্চিন্ত হতে পারব।” আরেক প্রতিবেশী পার্থসারথী দে-র বক্তব্য, ”বনগাঁ হাই স্কুলে ওর ব্যাচের বা তার আগে-পরে আরও অনেকেই চিকিৎসক (Doctor) হয়েছেন। তাঁরা আমাদের, বনগাঁবাসীর জন্য অনেক সময়েই চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করার চেষ্টা করেছে। তাঁদের সেলাম জানাই। কিন্তু আজ, সন্দীপ ঘোষকে আমরা সেলাম জানাতে পারছি না। তাঁর বিরুদ্ধ যে অভিযোগ উঠছে, তা সত্যি না হোক, সেটাই চাই।”
বনগাঁ হাইস্কুলের মেধাবী (Intellectual)সব ছাত্রদের নামের একটি ফলক রয়েছে। তাতে ১৯৮৯ সালের কৃতী ছাত্র হিসেবে সন্দীপ ঘোষের নাম খোদাই করা। কিন্তু আজকের পরিস্থিতির সাপেক্ষে অনেকে দাবি তুলছেন, সেই নামফলক (Nameplate) থেকে সন্দীপের নাম তুলে দিতে হবে। কেউ কেউ আবার এই দাবির বিরুদ্ধে। তাঁদের মত, আগে অভিযোগ প্রমাণিত হোক, তার পর নাম তুলে নেওয়ার বিষয়ে ভাবা যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.