ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বসিরহাট: তিন রাত পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও হদিশ মেলেনি, সন্দেশখালির ভাঙ্গিপাড়া গ্রামের যুবক দেবদাস মণ্ডলের। শেষবার তাঁকে ভেড়ির আল দিয়ে পালাতে দেখেছিলেন পরিবারের লোকেরা। পিছনে বন্দুক হাতে ধাওয়া করছিল দুষ্কৃতীরা। ছেলে যে ওই দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রেহাই পাননি, তা মেনেই নিয়েছেন ওই যুবকের মা। কিন্তু মৃত ছেলেকে শেষবারের জন্য দেখতে চান তিনি। পুলিশের কাছে তাই তার একটাই আরজি, “ছেলের দেহটা অন্তত ফিরিয়ে দিন।” দেবদাসের হদিশ পাওয়ার জন্য সিবিআই তদন্তের দাবি জানালেন পরিবারের লোকেরা।
বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করছেন, শনিবার রাতে ওই গ্রামের তৃণমূলের হামলায় যে দু’জন খুন হয়েছেন, তাঁরা দলের কর্মী। এমনকী, ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ দেবদাস মণ্ডলও বিজেপি কর্মী বলে দাবি করেছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু সোমবার দেবদাসের পরিবারের মুখে অন্য সুর শোনা গেল। দেবদাসের দাদা নিমাই মণ্ডলের চাঞ্চল্যকর দাবি, “ভাই বিজেপি করত না। আমরা তৃণমূলের সমর্থক। কিন্তু যেহেতু আমাদের আত্মীয় প্রদীপ বিজেপি করত, তাই দেবদাসও বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ভেবে তার উপর হামলা চালানো হয়েছে।” নিমাইবাবু জানান, দেবদাস ও তিনি দু’জনেই লোকশিল্পী। নির্বাচনের আগে পর্যন্ত দেবদাস বাউল গান গেয়ে রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলির প্রচার করতেন। নিমাইবাবুর কথায়, “ভাইকে যে ওরা মেরে ফেলেছে তা বোঝাই যাচ্ছে। ভাইকে আর ফিরে পাব না জানি, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা আরজি জানাচ্ছি, ওর দেহটা যেন অন্তত পাওয়া যায়।”
শনিবার রাতে ভাঙ্গিপাড়ায় যখন গন্ডগোল শুরু হয়, তখন দেবদাসের সঙ্গেই ছিলেন তাঁর স্ত্রী সুপ্রিয়াও। গোটা ঘটনার সাক্ষী তিনি। যে ভেড়ির আল দিয়ে দেবদাসকে শেষ পালাতে দেখা গিয়েছিল, দিনভর সেদিকেই তাকিয়ে বসে থাকছেন ওই গৃহবধূ। দেবদাসের বাবা বাসুদেব মণ্ডল জানান, “ভেড়ির আল দিয়ে পালানোর সময় দেবদাসকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। স্থানীয়দের থেকে জানতে পারি কোনওমতে পালিয়ে পাশের শেখপাড়ায় একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল সে। দুষ্কৃতীরা সেখানেও চড়াও হয়। দেবদাসকে মারধর দিয়ে আধমরা করে বাইকে তুলে নিয়ে গিয়েছে তারা। আর খোঁজ মেলেনি।” দেবদাস কোথায় আছে তার উত্তর নেই পুলিশের কাছেও। পুলিশের দাবি, ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় দেবদাসের খোঁজে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে। ভেড়িতে জাল ফেলেও দেখা হয়েছে কিন্তু হদিশ মেলেনি। নিখোঁজ ওই যুবকের পরিবারের লোকেদের দাবি, দেবদাসকে খুন করে অন্য এলাকায় ফেলে এসেছে দুষ্কৃতীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.