সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: টানা চারদিন পর মঙ্গলবার বেলাশেষে সন্ধের পর শুরু হল দুর্গাপুর (Durrgapur) ব্যারাজের ভাঙা লকগেট মেরামতির মূল কাজ। দুর্ঘটনার প্রায় ১০০ ঘন্টা পরও জলের বেগ রোধ করতে না পারার ফলেই কাজে এতটা বিলম্ব বলে বলেই মন করছেন সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা। তবে লুকিয়ে থাকা স্রোতস্বিনীর সৌজন্যে এখনও ভরা দামোদর। মঙ্গলবারও দামোদরে ঢুকেছে প্রায় ১৫০০ কিউসেক জল।
শনিবার সকালে ব্যারাজের ৩১ নং লকগেট ভেঙে যাওয়ার পর তা মেরামতির প্রস্তুতি হিসেবে সমস্ত ড্যাম (Dam) বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপরেও হু হু করে জলের প্রবেশেই একের পর এক বাতিল হয় পরিকল্পনা। ৫৫০ ফুট দুরে নতুন ‘ক্রসবার’ও বাতিল করতে হয়। এই ‘ক্রসবার’ তৈরির উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছিল সোমবার রাতেই। দেখা যায়, জলের গতি পরিবর্তনের বদলে পাশে থাকা ৩০০ মিটারের মাটির চরে আঘাত লেগে সেই জল আরও তীব্র বেগে ফিরে আসছে। ফলে পুরনো ‘ক্রস বার’ কে আরও শক্ত করতে একটি বড় বস্তায় ৮০ টি বালির বস্তা ভরে মোট ১০ টনের ৪ টি বালির বড় বস্তা দিয়ে রোধ করা হয় জলের বেগকে। সময় বাঁচাতে ভেঙে যাওয়া ৩১ নম্বর লক গেটের পরিকাঠামোগত আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থা সোমবার থেকে নদীর পাড়েই শুরু করে দেন ইঞ্জিনিয়াররা। এই ৩১ নম্বর লকগেট দুর্গাপুর ব্যারাজের গভীরতম লকগেট।
এদিকে, দামোদরের জল আটকানোর সব রকমের চেষ্টা যখন ব্যর্থ, তখন তার কারণ খুঁজতেই উঠে আসে এক অজানা নদীর কাহিনি। ঝাড়খণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার পর মাইথন ও পাঞ্চেত ড্যামের নীচে এসে মিশেছে খুদিয়া নদী। ড্যামের পর থেকে দুর্গাপুর ব্যারেজ পর্যন্ত জল বাঁধার ব্যাবস্থা নেই। তাই খুদিয়া নদীর জলকেও আটকানো হয়নি। কেমন ক্ষমতা এই খুদিয়া নদীর? ডিভিসির ওয়াটার ডিভিশনের মুখ্য বাস্তুকার সত্যব্রত বন্দোপাধ্যায় জানান, “১৯৭৮ সালের বন্যায় মাইথন ও পাঞ্চেত জল ছাড়ে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার কিউসেক। দুর্গাপুর ব্যারেজ ছাড়ে ২ লক্ষ ৬৬ হাজার কিউসেক। এই অতিরিক্তি জলের অধিকাংশই হচ্ছে খুদিয়া নদীর অবদান। এতটাই ক্ষমতাবান এই নদী।” এবারও সেই খুদিয়ার জলই দুর্গাপুর ব্যারাজের মেরামতির কাজকে বিলম্বিত করছে বলেই সত্যব্রতবাবুর অনুমান। তবে জলের বেগ আটকানোর জন্যে নতুন ‘ক্রস বার’ এর পরিকল্পনাতেই গলদ ছিল বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে পুরনো ‘ক্রস বার’কে শক্তপোক্ত করার দিকেই নজর দেন সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা। অন্যদিকে, লকগেটের সারাইয়ের প্রাথমিক কাজও চলে জোরকদমে। সেচ দপ্তরের সচিব গৌতম চট্টোপাধ্যায় দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করেন সমস্ত কাজ। গৌতমবাবু জানান, “নতুন কোনও সমস্যা তৈরি না হলে রাত থেকেই শুরু হবে নদীগর্ভে নেমে লকগেট মেরামতির কাজ।” রাত থেকে মেরামতি শুরু হলে ১৬ ঘন্টার মধ্যে শেষ হবে এই কাজ। তারপরও রয়েছে জলাধারে নির্দিষ্ট মাপে জল ভরানোর কাজ। সেই জল ক্যানেলে গেলে সেখান থেকে পাম্প করে ও পরিস্রুত করে পানীয় জল সরবারহ শুরু হতে হতে বৃহস্পতিবার রাত হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা।
ছবি: উদয়ন গুহরায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.