স্টাফ রিপোর্টার: সামনে বিশাল অযোধ্যা পাহাড়। সবুজ ঘাসবন, শাল, পিয়াল, শিমুল, মহুলের জঙ্গল নিয়ে সোজা উঠে গিয়েছে আকাশপানে। পাহাড়ের পায়ের নিচে বাড়িটা বেশ ছিমছাম। খোলামেলা অতিথি নিবাস। মঙ্গলবার জৈষ্ঠ্য দুপুরের প্রবল তাপেও সে বাড়িতে বেজায় ব্যস্ততা। হাঁকডাক, তোড়জোড়। আজ সাঁঝবেলায় বিয়ের লগন লেগেছে যে অভিমন্যুর। অভিমন্যু মানে অভিমন্যু মাহাতো। কুরমি সমাজের পরিচিত কবি।
পেশায় সাংবাদিক (Journalist) এই তরুণ কুড়মালি ভাষায় বাংলা হরফে বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে চলে এসেছেন সংবাদ শিরোনামে। যে আমন্ত্রণপত্রের দৌলতে দেশের অন্যতম প্রাচীন জনজাতি গোষ্ঠীর বিয়ের (Marraige) প্রথা জানতে বিস্তর কৌতূহল আজ আমজনতার।
এ বিয়ের পরতে পরতে চমক! কুড়মালি ভাষায় বৃন্দগান। গাছের সঙ্গে বিয়ে। জঙ্গল থেকে তুলে আনা আকন্দ ফুলের মালাবদল। একে অপরের মুখে পান পুরে দিয়ে কোলাকুলি করে বর ও কনেপক্ষের আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পারস্পরিক স্বীকৃতি। অভিমন্যুর বিয়েতে পুরোহিত নেই। কারণ কুড়মি বিয়েতে তার কোনও চল নেই। বিয়ের নিয়ম, রীতির তদারকি করেন গাঁ-বুড়ারাই। এদিনের বিয়েতে সে দায়িত্বে ছিলেন কৃপাসিন্ধু মাহাত ও বংশীধর মাহাত নামে দুই স্কুলশিক্ষক। কৃপাসিন্ধুবাবু জানালেন, “এখন কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ করা হলেও, কুড়মি সমাজে নিয়ম অনুযায়ী পান ও সুপারি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোই প্রথা। বাড়ির চৌকাঠের ডানপাশে হলুদ মাখানো সুপুরি রেখে আমন্ত্রণ করাটাই প্রথা।”
সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল তুলসি থান সাজানোর পালা। এটাই ছাদনাতলা। বেলা বাড়তে শুরু হল আশীর্বাদ পর্ব। কুড়মালি ভাষায় ‘বানানি’। বর-কনের পায়ে আলতা পরানো হল। সঙ্গে কুড়মালি ভাষায় বিয়ের গান। “আমাদের বিয়ের গান ১৬ রকম।” বলেন কৃপাসিন্ধুবাবু।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধে। বাজনদার ও অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে পায়ে হেঁটে বেশ কিছুটা গিয়ে একটি আমগাছের সঙ্গে বিয়ে হল বরের। গাছের গায়ে সিঁদুর পরিয়ে, আইবুড়ো খড়ি ভেঙে গাছের সঙ্গে কোলাকুলি করে বিয়ে হল। বরের মামি, মা-সহ মহিলারা বরবরণ করলেন মিষ্টিমুখে। এবার বিয়ের আসরে ফিরে কিছুটা বিরতি। এরপর কনের গাছ-বিয়ে। রীতি মেনে বাড়ির ভিতরেই মহুল গাছের সঙ্গে বিয়ে হল অপর্ণার। আকন্দ ফুলের মালাবদল করে নতুন জীবনের পথে পা রাখলেন অভিমন্যু-অপর্ণা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.