বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: যে ভবনের শিলান্যাস প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর (Jyoti Basu) করা। সেই হরেকৃষ্ণ কোঙার সমাজবিজ্ঞান কেন্দ্র ভবনের ঘরেই হয়েছে দীক্ষাদানের মত ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এমন অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নদিয়ার কল্যাণীর রাজনৈতিক মহলে।
সিপিএম (CPIM) পরিচালিত ট্রাস্টের ভবনে এই ধরনের ধর্মীর অনুষ্ঠান কীভাবে হয়? প্রশ্ন তোলা হয়েছে স্থানীয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে।
স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের অভিযোগ, “ভোট পাওয়ার জন্য সিপিএমও এখন ধর্মের সুড়সুড়ি দিচ্ছে। একটা সময় ওরা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে জাহির করত। সিপিএম নেতারা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেতেন না। তাঁরাই এখন নিজেদের ভবন ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করার জন্য দিয়ে তারা ধর্মীয় সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন ভোট পাওয়ার জন্য।”
যদিও উপরোক্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন হরেকৃষ্ণ কোঙার সমাজবিজ্ঞান কেন্দ্রের সম্পাদক সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ অলকেশ দাস। রবিবার বিকালে তিনি বলেন, “আমরা কাউকে আমাদের ভবনের ঘর দীক্ষা-টিক্ষা দানের জন্য দেইনি। এমনকী, ব্যবহার করার জন্যও কোন ঘর দেওয়া হয়নি। ওরা ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করেছে কি না করেছে, আমি তা জানি না। তবে ধর্মীয় কাজের জন্য ঘর দেওয়া হয়নি।”
কল্যাণীর ‘বি’ ব্লকে রয়েছে সিপিএম পরিচালিত ট্রাস্টি বোর্ডের হরেকৃষ্ণ কোঙার সমাজবিজ্ঞান কেন্দ্র নামের পুরনো ভবনটি। যদিও সেই ভবনের সামনে নেই কোন নাম উল্লেখিত বোর্ড। ২০০৪ সালে ৩০ জুন এই ভবনটির শিলান্যাস করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। সিপিএম সূত্রে খবর, ওই ভবনটি সিপিএমের নেতা-নেত্রীরা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে পার্টির বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকেন। সেই ভবনই রয়েছে একটি ঘর।সেই ঘরেই রবিবার সকাল থেকে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের দীক্ষা দান পর্ব হয়েছে বলে অভিযোগ। যাঁরা দীক্ষা নিয়েছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, সেই ঘরে ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের প্রতিকৃতি রেখে বেশ কয়েকজনকে দীক্ষা দেওয়া হয়েছে।
একথা স্বীকার করে নিয়ে কল্যাণী সৎসঙ্গ কমিটির সম্পাদক প্রকাশ নাথ বলেন, “এদিন সকাল থেকেই ওই ভবনের পাশে একটি মাঠে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের ১৩৫তম জন্ম মহোৎসব পালিত হয়েছে। সেই সঙ্গে কল্যাণীর ২৩তম থানাভিত্তিক উৎসবও পালিত হয়েছে। এছাড়া, মেডিকেল ক্যাম্প, চক্ষু পরীক্ষা শিবির-সহ বিনামূল্যে চিকিৎসা শিবির করা হয়েছে। হরেকৃষ্ণ কোঙারের নামে এই ভবনের একটি ঘরে দীক্ষাদান পর্ব হয়েছে এবং খাওয়া-দাওয়া হয়েছে। এখানে পার্টির কোন ব্যাপার নেই। যারাই এই ঘর চায়, তাদেরই দেওয়া হয়। আমরা আবেদন করেছিলাম, তাই এই ঘর আমাদের ব্যবহার করার জন্য দেওয়া হয়েছে। তবে তার জন্য কোন ভাড়া নেওয়া হয়নি। সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই ঘর পেয়েছি আমরা।”
এদিন সেই ঘরে স্ত্রী-সহ দীক্ষা নিয়ে রানাঘাটের বাসিন্দা কাজল কুমার দেবনাথ বলেন, “গুরুদেবের কাছে দীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা অনেক দিন আগে থেকেই ছিল। এই ভবনের একটি ঘরের মধ্যে মন্ত্র নিলাম, দীক্ষা নিলাম। ঘরের মধ্যে গুরুদেবের ফটো রয়েছে। তিনিই মন্ত্র দিয়েছেন। আমার মতো অনেকেই দীক্ষা নিয়েছেন।” যদিও ওই ভবনের একটি ঘরে দীক্ষাদান পর্ব চলায় বাইরের কাউকে সেই ঘরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
ভবনের কাছেই রয়েছে একটি জঙ্গল এবং তার পাশেই রয়েছে পিডব্লিউডি-র বড় মাঠ। সেই মাঠেই হয়েছে অনুকূল চন্দ্রের মূল অনুষ্ঠান। আর হরেকৃষ্ণ কোঙার সমাজবিজ্ঞান কেন্দ্রের ঘরে হয়েছে দীক্ষাদান পর্ব। ভবনের সামনে হয়েছে খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠান। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ভবনটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য দেওয়া হয়। সিপিএম পরিচালিত ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনস্থ ওই ভবনের সম্পাদক সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ অলকেশ দাস অবশ্য বলেছেন, “ওই ভবনে কোন দীক্ষার কাজ হয়নি। ওসব মিথ্যা কথা। পাশে অনুষ্ঠান ছিল। সামনে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। ওই ভবনের সঙ্গে ধর্মীয় কোনও অনুষ্ঠানের সম্পর্ক নেই। দীক্ষা-টিক্ষা নেওয়ার কোন খবর আমাদের কাছে নেই। আমরা কাউকে ওসব কিছু করতে দেইনি। ধর্মীয় কাজে কখনই ভবনের ঘর ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। ওরা ভবনের সামনের জায়গা ব্যবহার করেছে। সেটা আমাদের জায়গা নয়।”
কিন্তু কল্যাণী সৎসঙ্গ কমিটির সম্পাদক প্রকাশ নাথ স্পষ্ট জানিয়েছেন, “ওই ভবনের ঘরে অনুকূল চন্দ্রের দীক্ষা দেওয়া হয়েছে।” সেই বিষয়ে অলকেশ দাসের বক্তব্য, “তিনি তাঁর মতামত বলেছেন। আমাদের ভবনের ঘর ওসব ব্যাপারে দেওয়া হয় না। তাছাড়া, ওদের ব্যবহার করার জন্য কোন ঘরই দেওয়া হয়নি।” যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের কল্যাণী শহর-সভাপতি বিপ্লব দের বক্তব্য, “সিপিএম নেতারা এতদিন বলতেন, তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষ। ধর্মীয় কোনও অনুষ্ঠানে তাঁরা উপস্থিত হন না। ওঁরা এখন সেসব ভুলে গিয়ে ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছেন।”
তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত কল্যাণী পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলর সদস্য অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিপিএম নেতারা মুখে বলেন এক, কাজে করেন আর এক। সিপিএমের একটা অংশ ধর্মীয় রাজনীতি করছে। ওই জায়গায় সিপিএমের পার্টি অফিস করার ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধা থাকায় হরেকৃষ্ণ কোঙার সমাজবিজ্ঞান কেন্দ্র নামে ওই জমিটা নিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু আখেরে সেটি সিপিএমের পার্টি অফিসই। ওই ভবনেই সিপিএমের যাবতীয় মিটিং হয়। সেই পার্টি অফিসে এখন দীক্ষাদান হয়েছে, কাল কীর্তন হবে। পরশুদিন রামপুজো হতে পারে। কারণ, সিপিএমের লোকজনই রামপুজো করছেন। এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে সেই ভবনের ঘরেই দীক্ষাদান চলল দীর্ঘক্ষণ ধরে, অথচ সিপিএম নেতারা বলছেন, তাঁরা কিছু জানেন না, এটা বিস্ময়কর ছাড়া কিছু নয়। আসলে ভোটের কথা ভেবেই ধর্মের প্রতি ওঁরা আকৃষ্ট হয়েছেন।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.