Advertisement
Advertisement

Breaking News

Al Qaeda

ধর্মপ্রাণ ছেলেরা জঙ্গি! বিশ্বাসই হচ্ছে না আল কায়দা সন্দেহে ধৃত কালনার ২ পরিবারের

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন দুই ছেলের মা।

Religious boys are militants! two families of Kalna suspected to be Al Qaeda's member | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 3, 2023 9:38 pm
  • Updated:August 3, 2023 9:38 pm  

অভিষেক চৌধুরী, কালনা: ধর্ম ছিল ধ্যানজ্ঞান। বেশিরভাগ সময় তাই সেই চর্চাতেই মেতে ওঠা। কাজের ফাঁকে সময় বের করে মসজিদে যাওয়া, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, কোরান-হাদিস নিয়ে চর্চাটা যেন রক্তে মিশে গিয়েছিল। কালনার (Kalna)নাদনঘাট থানার ঘোলা গ্রামের সেই ১৯ বছর বয়সী যুবক শুকুর আলি শেখের আল কায়দা (AlQaeda) জঙ্গি যোগ সন্দেহে গুজরাট (Gujarat)পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখার হাতে রাজকোট থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার খবরটা মনেপ্রাণে বিশ্বাসই করতে পারছেন না তার পরিবার ও গ্রামের মানুষজন।

শুকুরের গ্রামের প্রতিবেশী ২২ বছর বয়সী যুবক হানিফ মল্লিককেও রাজকোট (Rajkot) থেকে পুলিশে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটাও মানতে পারছেন না কেউই। হানিফের পরিবার জানায়, শুকুরের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব রয়েছে। তাই সেই কারণেই হয়তো পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। যদিও হানিফ বুধবার তার মা হাসিনা খাতুনকে ফোনে জানায়, সে ভাল আছে। তাকে আগামী বৃহস্পতিবার পুলিশ ছেড়ে দেবে। অন্যদিকে জঙ্গি যোগ সন্দেহে কালনার আঙ্গারসন গ্রামের যুবক সইফ নওয়াজকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, ধৃতদের কাছ থেকে একটি দেশি পিস্তল-সহ ১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মৃত্যুর ২ বছর পরই ভাঙা হচ্ছে দিলীপ কুমারের বাংলো! তৈরি হবে ৯০০ কোটির বিশাল প্রকল্প]

এক ছটাক জমি নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসার। সরকারের দেওয়া ৪ শতক পাট্টা জায়গার মাটির ঘর ও অ্যাসবেসটসের চালের ঘরে বসবাস নাদনঘাটের ঘোলা গ্রামের যুবক শুকুর আলি শেখের বাবা হজরত শেখের ও মা ডালিয়া শেখের। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের ছেলে ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়াশোনা করে প্রায় তিন বছর আগে পেটের টানে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেয়। দাদা বাপন শেখও পাড়ি দেয় ছত্তিসগড়ের রাইপুরে। শুকুর প্রথমে মুম্বই গেলেও ৮-৯ মাস থেকে ফের গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে। লকডাউন ও করোনা আবহ শেষ হতেই গত ৯ মাস আগে গুজরাটের রাজকোটে সোনার কারিগর হিসাবে সে ফের কাজে যোগ দেয়।

কিন্তু ধর্ম ও হাদিস-কোরান চর্চায় মন পড়ে থাকা শুকুর ওই কাজটি ছেড়ে দিয়ে ওই এলাকাতেই শুকুর বড় একটি দোকানে কাজ শুরু করে বলে জানায় তার পরিবার। এও জানায়,সময়ে সময়ে কাছে থাকা মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া,ওখানে থাকা মৌলানার কাছে আরবি ভাষায় কোরান-শরিফের পাঠও নিতে থাকে সে। মাসের শুরুতেই গ্রামে থাকা বাবা-মা বৌদির সংসার চালাতে ও দেনার টাকা পরিশোধে দাদার মতই সেও টাকা পাঠাত বাড়িতে।

গত রবিবার সকালেও মায়ের সঙ্গে ফোনে বেশ কয়েকবার খোশমেজাজে গল্পও হয় তার। অক্টোবরে বাড়ি ফিরবে বলেও সে জানায়। কিন্তু হলে কী হবে,তারপর থেকে হঠাৎ করেই তার ফোন আসা বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার বেলা বাড়তেই রাজকোট থেকে আসা অন্য বন্ধুদের ফোন মারফত শুকুরের পরিবার জানতে পারে তাদের ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনই খবরে ভেঙে পড়ে শুকুরের বাবা-মা। বাবা হজরত শেখ বলেন,“শুকুরের দেওয়া টাকাতে সংসার খরচ চলে। দেনার টাকা পরিশোধ করি।আমরা খুবই গরিব। ছেলে আমার খুব ধর্মভীরু। কোনওদিন নমাজ না পড়লে ছেলে বকাঝকা করত।ও কোনও খারাপ কাজ করতেই পারে না। এই কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।সঠিক তদন্ত করে আমার নির্দোষ ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানাই।”

[আরও পড়ুন: কুনোর পশু চিকিৎসকরা অনভিজ্ঞ! চিতামৃত্যুর ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি বিশেষজ্ঞদের]

কাঁদতে কাঁদতে মা ডালিয়া শেখ বলেন,“আমার ছেলে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে।কোরান শরিফ নিয়েই বেশিরভাগ সময় মসজিদেই পড়ে থাকে। ওকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।আমাদের এই গরীবের সংসার কিভাবে চলবে আমরা তা বুঝতে পারছি না।” প্রতিবেশী যুবক ভোলা শেখ জানান,“ছোট থেকে ও খুবই ভাল ছেলে।ধর্মচর্চা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ভাল করে ঘটনার তদন্ত হোক। প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন হোক।”

হানিফ মল্লিকের মা জানান, “পরশুদিন ছেলে ফোন করেছিল।শুক্রবার পুলিশ ছেড়ে দেবে বলেছে।”কালনার আঙ্গারসনের বাসিন্দা সইফ নওয়াজের পরিবার বেশ গরীব।কালনা কলেজে স্নাতকে প্রথম বর্ষে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে তাই সেও রাজকোটে কাজে যায়।সোনার দোকানে কাজে লাগে।তার বাবা আবু শাহিদ জানান,“বিশ্বাসই হচ্ছে না যে ছেলে দেশবিরোধী কাজে জড়িত।ও খুবই সরল,সাদাসিধা ছেলে।ও একটা গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।”মা কোহিনূর বিবি বলেন,“দু-দিন আগেই কথা হল।ছেলে বলল ভালো আছি।এই ভালো থাকা?”যদিও এদিন বৃহস্পতিবার নাদনঘাট ও কালনা থানার পুলিশ ওই তিন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ও তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement