নন্দন দত্ত, ময়ূরেশ্বর: পাথর খাদান বিস্ফোরণে বেঘোরে প্রাণ গেল ম্যানেজার-সহ বেশ কয়েকজন শ্রমিকের৷ বৃহস্পতিবার ময়ূরেশ্বরের মাঠমহুলা গ্রামে ভোরে টেলিফোনে প্রথম দুর্ঘটনার খবর পৌঁছয় ম্যানেজারের স্ত্রী শিপ্রা ভাণ্ডারীর কাছে৷ কয়েক সেকেন্ডের ফোনে মাথায় উপর আকাশ ভেঙে পড়ে ভাণ্ডারী পরিবারে৷
এদিনের এই দুর্ঘটনার পর ম্যানেজারের স্ত্রী শিপ্রা বলেন, ‘‘ঘুমের ঘোরে শুনলাম, কে যেন বললেন, রাতের বিস্ফোরণের পর ম্যানেজার বিমল ভাণ্ডারীকে আর এলাকায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভোররাতে দুর্ঘটনার খবর শুনে বড় মেয়ে সুজাতাকে মুর্শিদাবাদের শ্বশুরবাড়িতে ফোন করলাম। খাদান মালিক বৈদ্যনাথ মণ্ডলকে ফোনে জানতে চাইলাম স্বামীর খবর কী?’’ শিপ্রাদেবীর দাবি, মালিক সহানুভূতি দেখানো তো দূরে থাক খেঁকিয়ে উঠে জানালেন, ‘রামপুরহাট হাসপাতালে এসে তোমার স্বামীর খবর নাও৷’’ তারপর আর বাকিটা বলতে পানেনি সদ্য স্বামীহারা শিপ্রাদেবী৷
[ বীরভূমের পাথর খাদানে বিস্ফোরণে মৃত অন্তত ৩ শ্রমিক, জখম আরও ২ ]
খবরে প্রকাশ, মেশিন দিয়ে পাথরখাদানের মাটি সরাতেই বিস্ফারণ। আর তাতেই একাধিক শ্রমিকের মৃত্যুতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে বীরভূম জুড়ে। বুধবার রাতে বীরভূমের পাঁচামি লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়ার লিপিপাড়া এলাকায় একটি পাথরখাদানে এই বিস্ফারণ ঘটে। এখনও পর্যন্ত তিন জনের মৃতদেহ রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। মৃত শ্রমিকদের মধ্যে এক জন বীরভূমের বাসিন্দা এবং দু’জন ঝাড়খণ্ডের। কিন্তু স্থানীয় আদিবাসী গাঁওতা সংগঠনের দাবি, এই ঘটনায় মোট ১৩ জন খাদান শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে। বেশ কয়েকটি মৃতদেহ লোপাট করা হয়েছে বলেও ওই সংগঠনটির তরফে অভিযোগ। এই দুর্ঘটনার জেরে পাঁচামির ঢোলকাটায় সড়ক অবরোধ করে আদিবাসীরা।
জেসিবি মেশিন দিয়ে খাদানের মাটি সরানোর সময় ঘটে যায় বিস্ফোরণ। এলাকাবাসীর দাবি, মাটির নিচে অবৈধ বিস্ফোরক লুকানো ছিল। তা থেকেই এই বিপত্তি ঘটে যায়। এই দুর্ঘটনার পর থেকে গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে আদিবাসী ও মালিকপক্ষের লোকেরা। ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানা এলাকায় একাধিক অবৈধ পাথরখাদান রয়েছে। যেখানে লোকচক্ষুর আড়ালে বিস্ফোরণ করে পাথর পাঠানো হত বিভিন্ন পাথরভাঙা ক্র্যাশার মেশিনে। বুধবার রাতে শিকারিপাড়া থানার লিপিপাড়া এলাকায় একটি পাথরখাদানে বিস্ফোরণ করার জন্য মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা বিস্ফোরক তোলা হচ্ছিল। আচমকা বিস্ফোরণ ঘটে। মৃত্যু হয় শ্রমিকদের। তাঁদের নাম ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের যাদব রায় ও লাদেন শেখ এবং বীরভূমের মল্লারপুর থানার মাঠমহুলা গ্রামের বাসিন্দা বিমল ভাণ্ডারী। ওই খাদানের মালিক বীরভূমের কাপাসডাঙা গ্রামের বাসিন্দা বৈদ্যনাথ মণ্ডল। তার মোবাইল বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। রামপুরহাট থানার পুলিশ কার্তিক মণ্ডল নামে এক ভিলেজ পুলিস-সহ চারজনকে আটক করেছে।
[ জন্মদিনে অবলেহিত রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য কবি নবীনচন্দ্র সেনের বাসভবন ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.